কোপানোর পর জবাই করা হয় রাজীবকে: পুলিশ

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে কোপানোর পর জবাই করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কামাল তালুকদারও সালাহউদ্দিন ওয়াহিদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2013, 02:34 AM
Updated : 16 Feb 2013, 04:28 AM

শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী রাজীবকে শুক্রবার রাতে মিরপুরের পলাশনগরে হত্যা করা হয়।

এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন।

এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।

পল্লবী থানার এসআই কামাল হোসেন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ব্লগার রাজীবকে প্রথমে কোপানো এবং পরে জবাই করা হয়েছে। তার মাথায়, চোয়ালে ও ঘাড়ে কোপানো হয়।

ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা দুটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

রাজীবের কম্পিউটার ডিভাইসটিও ঘটনাস্থলের পাশেই পড়ে ছিল।

পল্লবী থানার ওসি আব্দুল লতিফ শেখ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

মৃতদেহের গলায় গামছা পেঁচানো ছিল বলে জানান তিনি।।

রাজীব ব্লগে জামায়াত-শিবিরের স্বরূপ উন্মোচন করে লেখালেখি করতেন। এজন্য তাকে সম্প্রতি একটি ব্লগের পোস্ট থেকে হুমকিও দেয়া হয়।

রাজীবের সমমনা ব্লগাররা বলছেন, জামায়াত-শিবিরই রাজীবকে হত্যা করেছে।

রাজীব যে স্থানটিতে খুন হন, সেখানে ল্যাম্পপোস্টে বাতি ছিল না। ফলে খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা।

ওই এলাকাটিতে জামায়াত-শিবিরের গোপন আস্তানা রয়েছে, বলেন তিনি।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি পুলিশ।

ওই এলাকার চা দোকানি কামাল মিয়া সাংবাদিকদের জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি দোকান বন্ধ করছিলেন। ওই সময় দুজন পথচারী এসে তাকে জানায়, এদিকে একজন মানুষ জখম হয়ে পড়ে আছে।

তারা এলাকার কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি তাদের আগে কখনো দেখেননি।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজীবের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদি হয়ে শনিবারে ভোরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলেও এসআই কামাল জানান।

পেশায় স্থপতি রাজীব ও তার ভাই পলাশনগরের ওই বাসায় থাকতেন। তার বাবা ও মা থাকেন গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।

রাজীবের বাবা মুক্তিযোদ্ধা নাজিম সাংবাদিকদের বলেন, “আমি একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ছিলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু রাজাকাররা নিশ্চিহ্ন না হওয়ায় আজ আমার ছেলেকে হারাতে হয়েছে।”

“আমি রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই,” বলেন তিনি।

ময়না তদন্তের জন্য রাজীবের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিকালে শাহবাগে তার জানাজা হবে।

রাজীব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে মিরপুরে সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জনতা। বিক্ষোভ হয়েছে কাপাসিয়ায়ও। 

রাজীবের মেজ মামা খুররম হায়দার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার তার ভগ্নিপতি হারুন অর রশিদ তাকে ফোনে জানান যে রাজীবের বাসায় সামনে মারামারি হয়েছে।

“সেখানে গিয়ে রাস্তায় একটি লাশ চিৎ হয়ে পড়ে থাকতে দেখি, মাথায় অসংখ্য কোপের চিহ্ন, চেহারা এতটাই বিকৃত যে চেনা যাচ্ছিল না,” বলেন তিনি।

খুরররম বলেন, “চলে যাওয়ার সময় আবার ঘুরে দাঁড়ালাম। রাজীবের খবর জানতে তার মোবাইল ফোনে কল দিলাম। তখন লাশের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনে বেজে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে লাশের কাছে গেলাম। ডান পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে দেখলাম আমার ভাগ্নে রাজীবের ফোন।”

“লাশটি ভালো করে লক্ষ্য করে বুঝলাম- হ্যাঁ আমার ভাগিনা রাজীবের লাশ,” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে তিনি।

খুররম জানান, রাজীবের বাম পকেটে একটি কলা ছিল। আন্দোলনের পর থেকে পলাশ নগরের টিনশেড বাসায় ফিরত না সে। শাহবাগেই থাকত।

শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে ভাগ্নে সঙ্গে শেষ কথা হয় খুররমের।

কী কথা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন কথা হয়নি। তবে তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রায়ই কথা হত তার সঙ্গে।

“রাজীব বলত, মামা আমরা একটি আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি, এখন তরুণরা এ আন্দোলনকে লক্ষ্যে নিয়ে যাবে।”

“রাজীব প্রায়ই বলতো, ‘মামা আমি ইসলামবিরোধী নই, তবে জামায়াত ইসলামের বিরোধী’।”

রাজীবরা দুই ভাই-ই এশিয়ান প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষে ওই টিনশেড বাড়িতে থাকতে শুরু করে।

খুররম জানান, রাজীবের লাশ রোববার গাজীপুরে নেয়া হবে। কাপাসিয়া পাইলট স্কুল মাঠে জানাজা শেষে তড়গাঁও ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হবে।

রাজীবের মা নার্গিস হায়দার আওয়ামী লীগ করেন। রাজীবের নানা মফিজ উদ্দিন মাস্টার ১৯৮৯ সালে মারা যাওয়ার আগ পযর্ন্ত আওয়ামী লীগের গাজীপুর জেলার সভাপতি ছিলেন।

তবে রাজীবরা দুই ভাই কোনো দলে যুক্ত ছিল না বলে তাদের মামা জানান।

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক কোনো বিরোধ থাকতে পারে কি না- প্রশ্ন করা হলে খুররম বলেন, “কখনো না। শাহবাগের আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিল রাজীব। এই কারণেই জামায়াত-শিবির তাকে হত্যা করেছে।”