বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধের মধ্যে সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
Published : 06 Feb 2015, 10:53 AM
পরীক্ষা উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসচিব গৌতম কুমার সাংবাদিকদের বলেন, “সারা দেশে প্রথম দিনের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।”
প্রথম পরীক্ষায় কতোজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন এবং অনিয়মের জন্য কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে বিকাল নাগাদ তথ্য দিতে পারবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে শুক্রবার সকালে পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টাখানেকের মাথায় ঢাকার একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, সারাদেশেই সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হচ্ছে।
সকাল ৯টা থেকে বাংলাদেশের তিন হাজারের বেশি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ের সমাপনী পরীক্ষা। এতে ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা।
প্রথম দিন আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়।
এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজবীদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে সকালে বাংলা-২ (১৯২১) সৃজনশীল এবং বিকালে বাংলা-২ (৮১২১) সৃজনশীল বিষয়ের পরীক্ষায় বসে শিক্ষার্থীরা।
দুই দফা পেছানো পর শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়, যদিও এদিন কয়েক বিভাগে ছাত্রদলের হরতালের আহ্বান রয়েছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হরতাল ডাকার সমালোচনা করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “আজ হরতাল দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। এই দিনে যারা হরতাল দেয় তারা কোনো রাজনীতি করে? এর উদ্দেশ্য পরীক্ষা প্রতিহত করা।”
পরীক্ষার মধ্যে হরতাল না দিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করতে আর কোনো কর্মসূচি দেবেন না। আশা করছি আপনাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে।”
এবার কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি এবং ফেইসবুকেও এ ধরনের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিভ্রান্তি ছড়াবেন না, জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না।”
আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
এসময় মন্ত্রীর কাছে তাদের আতঙ্ক, শঙ্কা ও পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো তুলে ধরেন কয়েকজন অভিভাবক।
এছাড়া পরীক্ষার তারিখ বার বার পরিবর্তন হওয়ায় সন্তানদের ওই সব পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী ৩০-৪০ বছর এই শিক্ষার্থীরাই বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে। হরতালের কারণে পরীক্ষা পেছালে তাদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়।
পরে আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে হরতালে দুই দফা পেছানোর পর অবরোধের মধ্যেই শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
টানা পাঁচ দিনের হরতাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হলেও তারপর রাতে সিরাজগঞ্জে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতালের কারণে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায় গত ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে শুক্রবার আনা হয়।
হরতালে এসএসসির দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৪ ফেব্রুয়ারির পরীক্ষাও পিছিয়ে যায়, যা ৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার হবে।
হরতালের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন পরপর দুটি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী বিএনপির লাগাতার অবরোধের ফাঁকে ফাঁকেই হরতাল থাকছে।