সেই টিএসসি, সঙ্গে শীতের পিঠা, ফুচকা, চা; ছোট-বড় মিলিয়ে আড্ডা আর গানে শুক্রবারের বিকেল যেন সবাইকে ফিরিয়ে নিল ছাত্রজীবনের সেই সব রঙিন দিনে।
Published : 30 Jan 2015, 08:36 PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পুনর্মিলনীতে এসে পুরনোরা মাতলেন ক্যাম্পাসজীবনের স্মৃতি রোমন্থনে। আর সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকা এই পুর্বসূরীদের কাছে পেয়ে নতুনদের বিকেল কাটল উচ্ছ্বাসে।
ইংরেজি বিভাগ অ্যালামনাই সোসাইটির আয়োজনে প্রতিবছরের মতো এবারও জানুয়ারির শেষ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে মিলিত হয়েছিলেন ৪৭৫ জন সাবেক শিক্ষার্থী।
বিকালের এই আয়োজন সাড়ে ৪টার দিকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন ৩টার পর থেকেই। সারি সারি চেয়ার টেবিলে শুরু হয়ে যায় ক্যাম্পাস জীবনের সেই আড্ডা। সেই সঙ্গে ক্যামেরা আর মোবাইল ফোনে চলে স্মৃতির গ্রন্থনা।
বিকেল সোয়া ৫টার পর সঞ্চালক যখন অনুষ্ঠান শুরুর জন্য সবাইকে প্যান্ডেলে ডাকলেন, তখনো যেন আড্ডা ছেড়ে নড়তে মন সরছিল না কারও।
প্রয়াত অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাহমিনা আহমেদ।
প্রতিবারের মতো এবারো পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ইংরেজি বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয় সোসাইটির পক্ষ থেকে।
যারা পুরস্কার তুলে দেন, তাদের মধ্যে ছিলেন এ অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ অ্যালামনাস অধ্যাপক আহসানুল হক, যিনি ১৯৫৬ সালে এ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদসহ অনেকেই ব্যস্ততার ফাঁকে ছুটির এই একটি বিকেল কাটাতে এসেছিলেন পুরনো বন্ধু আর সহপাঠীদের সঙ্গে।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই একটি অনুষ্ঠানেই বিভাগের বন্ধু-বান্ধব, ছোট-বড় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। এ কারণে এই পুনর্মিলনী তিনি ‘মিস’ করতে চান না।
মোশাররাফ হোসাইনের সঙ্গে একই ক্লাসে পড়েছেন আব্দুল মজিদ। তিনিও পুনর্মিলনীতে এসেছেন কিছুক্ষণের জন্য হলেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই সব দিনে ‘ফেরার লোভে’।
“দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। বছরগুলো খুব দ্রুত কাটে। এই অনুষ্ঠান বছরে একবার হলেও মনে হয়, খুব অল্প সময়ের মাঝেই হচ্ছে।”
বিভাগের হিসাবে কয়েক বছরের ‘সিনিয়র’ হলেও একই আড্ডায় পাওয়া গেল সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিমা হায়দারকে।
তিনি বললেন, “এখানে এলে মনে হয়, এইতো আমার ক্যাম্পাস, আমার বিশ্ববিদ্যালয়।”
এক ফাঁকে অনুষ্ঠানে ঘুরে যান সম্প্রতি র্যাবের দায়িত্ব নেওয়া বেনজীর আহমেদ। তিনিও ইংরেজির সাবেক ছাত্র।
তার সহপাঠী জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আর বেনজীর একই স্টাডি সার্কেলে ছিলাম। আজ মনে হয়- এইতো সেদিন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনকে খুব মিস করি।”
“২০০০ সালে অ্যালামনাই সোসাইটির অনুষ্ঠানে প্রথম আসি। সে বছর আমার বন্ধুদের কাউকে পাইনি। খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর এই অনুষ্ঠানে আসার হার আস্তে আস্তে বেড়েছে। এবার প্রায় দশজন এসেছি। বেশ আড্ডা দিচ্ছি, কথা বলছি।”
অনেক বছর পর ফাতেমা এবার দেখা পেয়েছেন প্রিয় বান্ধবী সেলিমা কিশোয়ারের। কিশোয়ার পুনর্মিলনীতে এসেছেন এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, “নানা কারণে আগে আমার আসা হয়ে উঠেনি। এবার এসে বেশ ভাল লাগছে।”
“আমাদের সময়ে ছেলেমেয়েরা এভাবে মিশতে পারত না। এখন সেই বান্ধবীদের সঙ্গে একটা সিভিল সম্পর্ক হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাদের নিয়ে কত কবিতা লিখেছি... কোনো কাজেই আসলো না।
বদরুল আহসানের বন্ধুদের মধ্যে মোহসেনা রেজা স্বপ্না, নাজরিন রহমান লিন্ডা, জাফরুল করিমসহ কয়েকজনকে পাওয়া গেল এ আড্ডায়।
২০১৩ সালে স্নাতক পর্যায়ে ভালো ফলের স্বকৃতি হিসাবে এবার মেহেদী করিম সীমান্ত, নুসরাত জাহান ও আনিকা সাবাকে পুরস্কৃত করেছে ইংরেজি বিভাগ অ্যালামনাই সোসাইটি।
পুনর্মিলনীতে গান গেয়ে শোনান হোসনেয়ারা মিরা ও রোমানা ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দ্রাবিড়া আঞ্জুমান হুদা।