দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকা বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো বোমাবাজকে গুলি করতে বিজিবি কুণ্ঠিত হবে না।
Published : 15 Jan 2015, 01:12 PM
বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিতে যতদিন প্রয়োজন ততদিন সীমান্তরক্ষা বাহিনী মাঠে থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে আজিজ আহমেদ বলেন, “সীমান্ত রক্ষা আমাদের প্রাইম কাজ। কিন্তু জনগণের জানামাল রক্ষা করা, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা দেওয়া- এসব আমাদের সেকেন্ডারি কাজ। সুতরাং এ কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, বিজিবির সবই ‘লিথাল’ (প্রাণঘাতি) অস্ত্র। বিজিবি সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে।
“একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায় তাহলে ৫ জন লোক নিহত হতে পারে। এই দৃশ্য কোনো বিজিবির সদস্যের নজরে এলে ওই বোমাবহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি করা তার দায়িত্ব।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা দিতে এ পর্যন্ত দেশের ২১ জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। অবরোধের মধ্যে রাতে মহাসড়কে দূরপাল্লার যান চলাচলেও নিরাপত্তা দিচ্ছে এ বাহিনী।
বিজিবি সদস্যরা কতদিন এভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “২০১৩ সালের কথা তো আপনাদের মনে আছে, সুতরাং আমরা মাসের পর মাস, যতদিন প্রয়োজন, সিভিল প্রশাসনকে সহায়তা করে যাব।”
সংবাদ সম্মেলনে আজিজ আহমেদ বলেন, ঢাকার বাইরে ১৭টি জেলায় বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। প্রতিদিনি ৮০-৮৫ প্লাটুন বিজিবি কাজ করছে।
আরো ৩৫ জেলা থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেসব জেলার জন্য ৭০-৭৫ প্লাটুন বিজিবি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজন হলেই তারা যেতে পারেন।
দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি প্রধান বলেন, “পরিস্থিতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। আমি প্রতিদিন প্রতিবেদন পাচ্ছি। দু’ একটা রুটে সমস্যা আছে। তবে ঠিক হয়ে যাবে।”
তিনি জানান, কয়েকটি স্থানে দায়িত্ব পালনের সময় বিজিবির গাড়ির পাশে বোমা ফাটানো হয়েছে। তবে তাতে কেউ আহত হননি।
বুধবার রাতেও বিজিবির পাহারায় ৩৫ হাজার গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেছে বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনের বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়াও বিজিবির গত বছরের কর্মকাণ্ডের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
তিনি বলেন, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে কোনো সমস্যা হলে তা তাৎক্ষণিক যোগাযোগে সমাধান করা যায়।
“গত জুন ও ডিসেম্বরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। আগে মিয়ানমার কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ধরত না। আলোচনার পর তার একবার দুই লাখ, আরেকবার চার লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে।”
তবে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর চোরাকারবারিদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে যায় বলে হতাশা প্রকাশ করেন বিজিবি প্রধান।
“ইয়াবাসহ একজনকে ধরে দিব... কিন্তু কিছুদিন পর মুচকি হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলে লাভ কী? আইনি দুর্বলতার কারণ এটা হচ্ছে না। এটা হচ্ছে সিস্টেমের জটিলতার কারণে।”
বিজিবি মহাপরিচালক জানান, এ বাহিনীর ‘এয়ার উইং’ হচ্ছে। এজন্য চারটি হেলিকপ্টার কেনা হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিও পাওয়া গেছে।