তুমুল বাদানুবাদের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় বাদী ও প্রথম সাক্ষীর দ্বিতীয় দফায় আংশিক সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বিচারিক আদালতে।
Published : 02 Dec 2014, 12:10 AM
সোমবার ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক হারুন-অর রশিদের সাক্ষ্য নিয়ে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর জিয়া এতিমখানা (অরফানেজ) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন হারুন। তখনও তার সাক্ষ্যগ্রহণ আংশিক রেখেই শুনানি মুলতবি হয়েছিল।
এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিএনপি চেয়ারপারসনের তিনটি আপিলের আবেদন বিচারাধীন থাকা এবং হরতালের কারণ দেখিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে নেন তার আইনজীবীরা।
ওই তিনটি আবেদন খারিজের পর সোমবার সকাল ১১টা থেকেই রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত বাসুদেব রায়ের অস্থায়ী আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন মামলার বাদী হারুন-অর রশিদ।
কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময় চাইলে তা নিয়ে বাদী ও বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল বাঁধে।
সময় আবেদন করে খালেদার আইনজীবীরা বলেন, হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার পক্ষে এই বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আদালত বদলের আবেদন করা হয়েছে, যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
সে আবেদনটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি রাখা হোক, বলেন আইনজীবীরা।
এই কথায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানালে দুইপক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। হৈ চৈ-এর মধ্যে দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনই চাপা পড়ে যায়।
বিচারক বাসুদেব রায় দুই পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন জসীমসহ আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ব্চিারককে আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কথা বলতে সময় দেওয়ার অনুরোধ জানান।
তাদের ওই অনুরোধ না রাখলে আদালতকে বিচারে কোনও সাহায্য করবেন না বলেও জানান তারা।
এ কথায় আদালতে আরেক দফা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খালেদার আইনজীবীদের মধ্য থেকে বিচারকে ‘সরকারের দালাল’ বলে মন্তব্যও করা হয়।
এক পর্যায়ে বাসুদেব রায় মুলতবির আবেদন নাকচ করলে আসামিপক্ষ থেকে পুনরায় সেই আবেদন বিবেচনার জন্য বিচারককে অনুরোধ জানানো হয়।
খালেদার পক্ষে আদালতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নাল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের সঙ্গে ছিলেন হুমায়ুন হোসেন পাঠান, কবীর হোসেন, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের হৈ চৈয়ের মধ্যে দুপুর আড়াইটার দিকে বাদীর কয়েক লাইন জবানবন্দি নিতে সমর্থ হন বিচারক বাসুদেব রায়।
এরপর হট্টগোলের মধ্যে বাদীকে সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নামতে বাধ্য হতে হয়। বিচারক তখন শুনানি মুলতবির আদেশ দেন।
মোশাররফ হোসেন কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছল ছাতুরির আশ্রয় নিয়ে আসামিপক্ষ মামলার বিচার ব্যাহত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তারা ব্যর্থ হয়ে বিচারককে বিভিন্ন কথার জালে আটকে রাখতে চেষ্টা করেন এবং হুমকিও দেন।”
এদিন আদালতে ছিলেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। জামিনে থাকা দুই আসামি সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির ছিলেন।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- খালেদার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক আমলা কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
লন্ডনে থাকা তারেকের পক্ষে তার আইনজীবীরা আদালতে হাজিরা দেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
জিয়া এতিমখানা (অরফানেজ) ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতে এতিমদের সহায়তার জন্য আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
খালেদার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাও বাসুদেব রায়ের আদালতে বিচারাধীন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় করা এই মামলায় ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়।
দুদক কর্মকর্তা হারুনের দায়ের করা এই মামলার অন্য তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক।