খালেদার মামলায় বাদীর সাক্ষ্য ফের পেছাল

খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে দুদকের করা দুটি দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন তারিখ ঠিক করে দিয়েছে আদালত। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2014, 04:33 AM
Updated : 13 Nov 2014, 01:48 PM

আগামী ২৪ নভেম্বর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ বাসুদেব রায় রোববার খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে এই দিন নির্ধারণ করেন।  ঢাকার বকসিবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে এ দুটি মামলার বিচার চলছে।

সোয়া পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের এ দুটি মামলায় হাজিরা দিতে বেলা ১১টা ৬ মিনিটে আদালেতে পৌঁছান খালেদা। মিনিট বিশেক শুনানি শেষেই আদালত ত্যাগ করেন তিনি।

বাদী হারুন অর রশিদ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থিত হলেও বিচারক খালেদার আবেদন মঞ্জুর করায় তার জবানবন্দি পিছিয়ে যায়।

খালেদার আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে এ দুটি মামলার বিষয়ে লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় থাকার কথা বলে সাক্ষ্য পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের নতুন তারিখ ঠিক করে দেয়। 

খালেদার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন ও  সানাউল্লাহ মিয়া।

এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর আহবায়ক মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলুসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর এ দুটি মামলায় আদালতে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। এরপর কয়েক দফা তারিখ পড়লেও নিরাপত্তার কথা বলে এবং উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় থাকার কারণ দেখিয়ে তিনি শুনানিতে অনুপস্থিত থাকেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সময়ের আবেদন নাকচ করে তার অনুপস্থিতিতেই একটি মামলায় বাদীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এ দুটি মামলায় গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠন করে আদালত।

এর মধ্যে এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় খালেদা ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জন এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো তিনজন আসামি হিসাবে রয়েছেন।

এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে গেলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

মামলা বৃত্তান্ত

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।

এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

তারেক রহমান উচ্চ আদালতের জামিনে গত ছয় বছর ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। বাকি দুজন পলাতক।