শামারুখের ময়নাতদন্ত আবার হবে

‘আত্মহত্যা’ বলে দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বাবার আবেদনে মেয়ে ডা. শামারুখ মাহজাবিনের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2014, 02:26 PM
Updated : 25 Nov 2014, 07:45 PM

নুরুল ইসলামের আবেদনে মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহা এই নির্দেশ দিয়ে যশোরের জেলা প্রশাসককে তা বাস্তবায়ন করতে বলেছেন।

ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতেও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান।

আদেশে সিভিল সার্জনসহ মোট তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। ওই কমিটির নেতৃত্বেই যশোরের কারবালা কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করতে হবে।

মেয়ের মৃত্যুর জন্য নুরুল ইসলাম শুরু থেকেই তার জামাতা হুমায়ুন সুলতান এবং তার বাবা সাবেক এমপি খান টিপু সুলতান ও তার স্ত্রী ডা. জেসমিন আরা বেগমকে দায়ী করে আসছেন।

টিপু সুলতানের পরিবার শামারুখের মৃত্যুকে আত্মহত্যা দাবি করলেও নুরুল ইসলামের অভিযোগ, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে শামারুখের ময়নাতদন্তের পর প্রতিবেদনে একে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়।  নুরুল ইসলামের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও তার চিকিৎসক স্ত্রী ময়নাতদন্ত প্রভাবিত করেছেন।

হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্রী শামারুখের সতীর্থরাও হত্যার অভিযোগ তুলে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

গত ১৩ নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডিতে টিপু সুলতানের বাসা থেকে ডা. জেসমিন পুত্রবধূ শামারুখকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

যশোরের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নুরুল ইসলামের মেয়ে শামারুখের (২৪) সঙ্গে দুই বছর আগে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ুনের বিয়ে হয়।

শামারুখ এমবিএসএস পাস করে বিএসএমএমইউতে এফসিপিএস করছিলেন। স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরের ঢাকার বাড়িতে থাকতেন তিনি। টিপুর মা জেসমিনও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষক।

শামারুখের মৃত্যুর পর ওই রাতেই ঢাকায় এসে হুমায়ুন, তার বাবা টিপু ও মা জেসমিনের বিরুদ্ধে হত্যামামলা করেন নুরুল ইসলাম। ওই মামলায় টিপু ও জেসমিন আগাম জামিন নিলেও হুমায়ুনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

নুরুল ইসলামের অভিযোগ, বিয়ের সময় হুমায়ুনকে ‘ব্যারিস্টার’ বলা হয়েছিল, যদিও তিনি তা নন। এরপর হুমায়ুন বিভিন্ন সময় শামারুখকে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে অর্থ নিয়েছিলেন।

নুরুল ইসলামের অভিযোগ করেন, টিপু সুলতানের বিভিন্ন ‘অবৈধ’ কর্মকাণ্ডের কথা জেনে ফেলায় তা ঠেকাতে শামারুখকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই ধরনের আশঙ্কার কথা টেলিফোন আলাপে মেয়ে তাকে বলেছিলেনও।

মেয়ের সঙ্গে নিজের টেলিফোন আলাপের রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখতেও পুলিশকে পরামর্শ দিয়েছেন নুরুল ইসলাম।

এরপর ওই কথপোকথনের রেকর্ড পেতে চেষ্টা করার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই শরীফুল ইসলাম।

শামারুখের বাবা শুরুতেই আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন যে প্রভাব খাটিয়ে তার মেয়ের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।  

এর মধ্যেই গত রোববার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে ধানমণ্ডি থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শামারুখ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান হাবিবুজ্জামান চৌধুরী ওই ময়নাতদন্ত করেছিলেন।

প্রতিবেদনের ফলাফল শুনে নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।”

পুনরায় ময়নাতদন্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করবেন বলেও সেদিন জানিয়েছিলেন তিনি। ওই আবেদনেই মঙ্গলবার আদালতের আদেশ হল।