যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের পূত্রবধূর লাশ ঢাকায় তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
Published : 13 Nov 2014, 05:28 PM
শামারুখ মাহজাবিন শ্যামা (২৪) আত্মহত্যা করেছেন বলে আওয়ামী লীগের এই নেতা দাবি করেছেন। তবে শ্যামার পরিবার ও সহপাঠীদের সন্দেহ, এটি হত্যাকাণ্ড।
শ্যামা রাজধানীর হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্নি শেষ করার পর বিএসএমএমইউতে এফসিপিএস ডিগ্রি নিতে ভর্তি হয়েছিলেন।
যশোরের আইনজীবী টিপু সুলতানের বড় ছেলে হুমায়ুন সুলতানের সঙ্গে দুই বছর আগে শ্যামার বিয়ে হয়। তারা ধানমণ্ডিতে টিপু সুলতানের বাড়িতে থাকতেন।
ওই বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে টিপু সুলতানের স্ত্রী জেসমিন আরা বেগম পুত্রবধূ শ্যামাকে নিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে যান। জেসমিন হলি ফ্যামিলির গাইনি বিভাগের চিকিৎসক।
টিপু সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাসায় নিজের ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া শ্যামাকে দরজা ভেঙে নামিয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপমৃত্যুর ঘটনা হওয়ায় পুলিশও সেন্ট্রাল হাসপাতালে যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রেজাউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,সাবেক সংসদ সদস্যের পূত্রবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে তারা খবর পেয়েছেন।
বুধবার একটি টেলিফোন কল নিয়ে শ্যামার সঙ্গে তার স্বামীর ঝগড়া হওয়ার খবর জানতে পেয়েছেন বলেও এই পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
“গতকাল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গণ্ডগোল হয়। এরপর আজ সকালে তারা দুজনে বাসা থেকে বের হয়। দুপুরে শ্যামা বাসায় ফিরে কাজের বুয়াকে বলেছে, ‘আমার কাজ আছে’। এই বলে বেডরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।”
“পরে দুপুরে খাবারের জন্য ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাথরুমে গ্রিলের জানালার সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।”
সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়ে শ্যামার সহপাঠী ও তার মামাকে দেখা গেলেও শ্বশুর বাড়ির কাউকে দেখা যায়নি।
শ্যামার বাবা যশোরের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম পিডব্লিওডির অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী, মা এক বছর আগে মারা গেছেন। শ্যামা ছাড়াও তাদের এক ছেলে রয়েছে।
শ্যামার মামা শহীদুরের সন্দেহ, তার ভাগ্নীকে হত্যা করা হয়েছে।
সহপাঠী ডালিয়া নওশীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শ্যামার পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন তারা। তাছাড়া আত্মহত্যা বলা হলেও গলায় ওড়নার ছাপ গভীর নয়।
তখন সেন্ট্রাল হাসপাতালে উপস্থিত ঢাকা মেডিকেল কলেজের রমনা বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল বাতেন এই অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “এটি আত্মহত্যা, না হত্যা- তা ময়নাতদন্ত হলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
যশোর থেকে রওনা হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্যামার বাবা নুরুল ইসলাম সেন্ট্রাল হাসপাতালে পৌঁছেন। তিনিও অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে।
তিনি জানান, বিয়ের সময় তাদের জানানো হয়েছিলে যে হুমায়ুন ব্যারিস্টার, কিন্তু পরে তারা জানতে পারেন যে তাদের জামাতা ব্যারিস্টার নন।
“সবই মেনে নিয়েছিলাম, তারপরও মেয়েটাকে মেরে ফেলল,” বলেই কেঁদে ফেলেন নুরুল ইসলাম।
সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে শ্যামার লাশ ধানমণ্ডি থানায় নিয়েছে পুলিশ। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়ার কথা।
তবে শ্যামার পরিবার একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়না তদন্তের দাবি তুলেছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করবেন, এরপর ময়নাতদন্ত নিয়ে কোনো আপত্তি থাকলে আদালতে শ্যামার পরিবার প্রতিকার চাইতে পারবেন।