রাজনৈতিক বিরোধ অথবা বৈষয়িক দ্বন্দ্ব- এই দুটি বিষয় ধরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।
Published : 10 Aug 2014, 09:46 PM
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনের নাম জানা গেছে বলে ঢাকা মহাসগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন।
শনিবার রাতে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নিজের বাসার সামনে গুলিতে নিহত হন জাহাঙ্গীর। ১৫ অগাস্ট থানা পর্যায়ের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক থেকে ফিরছিলেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে ইচ্ছুক এই নেতা।
রাজধানীর এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী নুর মোহাম্মদের মেয়েজামাই জাহাঙ্গীর।
২০১১ সালের জানুয়ারিতে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক খুন হন। ওই হত্যাকাণ্ডের আসামি ছিলেন জাহাঙ্গীর।
ফজলুল হত্যাকাণ্ডের পর ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে নিখোঁজ হাজী নুর। তার দুই মাস পর থেকে নিখোঁজ তার আরেক মেয়েজামাই আব্দুল মান্নান।
নুরের পরিবারের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই হাজী নুর ও মান্নানকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা অস্বীকার করেছে।
হাজী নুরের তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে মামুন খুন হন এবং অন্যজন বাঘার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তার বড় ছেলে মিন্টু হত্যাসহ একাধিক মামলায় ফেরার। তবে আগারগাঁওয়ে তার একটি গ্রুপ রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
শ্বশুরের অনুপস্থিতে তার সম্পত্তি দেখভাল করতেন জাহাঙ্গীর। তা মিন্টু ভাল চোখে দেখছিল না বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি মিন্টুকে ঢাকায় দেখা গেছে। পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
আগারগাঁও এলাকায় প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাট বসে। এই হাটের জন্য সিটি কর্পোরেশনের এই সপ্তাহেই দরপত্র ডাকার কথা।
আগারগাঁও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীরের এই দরপত্রে অংশ নেয়ার কথা। পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের বিষয়টিও পুলিশের তদন্তে রয়েছে, যাতে সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন জাহাঙ্গীর।
উপকমিশনার বিপ্লব সরকার বলেন, “সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে। তদন্ত অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে যেন কোনো নিরাপরাধ লোক হয়রানির শিকার না হয়।”
হত্যাকাণ্ডে জড়িত কয়েকজনের নাম জানা গেছে দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “দুইজনের নাম পেয়েছি আমরা। এদের একজন পরিকল্পনাকারী, অন্যজন সরাসরি অংশগ্রহণকারী।”
ঘটনার পর থেকে জাহাঙ্গীরের গাড়িচালক পলাতক রয়েছেন।জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকেও খুঁজছে পুলিশ।
রোববার জোহরের নামাজের পর আগারগাঁও এলাকায় জানাজা শেষে নেত্রকোনা নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় জাহাঙ্গীরকে।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। পুলিশ জানিয়েছে, লাশ দাফনের পর ঢাকায় ফিরে তারা মামলা না করলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করবে।
জাহাঙ্গীর ও ফজলুল হকের আগে আগারগাঁও এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার শাহাবুদ্দীন খুন হয়েছিলেন।