‘খাদ্য ধ্বংসের আগে ফরমালিনের মাত্রা দেখুন’

বাজারে যে কোনো খাদ্যপণ্যে ফরমালিন পাওয়া গেলেই তা ধ্বংস না করে রাসায়নিকের মাত্রা দেখা উচিৎ বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. দ্বীন মো. নূরুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2014, 08:46 AM
Updated : 22 July 2014, 10:02 AM

তিনি বলেছেন, পরীক্ষাগারের মতামত ছাড়া ফরমালিনবিরোধী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়াও ঠিক হবে না।

“ফলমূল, শাক-সবজি এমনকি মানবদেহেও প্রাকৃতিকভাবে ফরমালিন তৈরি হয়। বাংলাদেশে এখন আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাগার রয়েছে। সেখানে বেশ কিছু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জাতিসংঘের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম মাত্রার ফরমালিন রয়েছে।”

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ফরমালিন ও খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মহাপরিচালক। 

ফর্মালিন হলো ফর্মালডিহাইডের একটি জলীয় দ্রবণ যা টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, কাগজ ও রঙ শিল্প এবং মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এই দ্রবণ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছ,শাকসবজি ও ফল দীর্ঘ সময় তাজা দেখাতে ফরমালিন ব্যবহার করেন।

এ সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে ফল পাকাতে এবং তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট। তাতে সারা বছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগারে পর‌্যবেক্ষণ চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়।

কিন্তু ফল আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন ফরমালিন শনাক্তে ব্যবহৃত যন্ত্র নিয়ে আপত্তি তুলে রিট আবেদন করলে গত সোমবার ওই যন্ত্রই পরীক্ষার নির্দেশ দেয় হাই কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলোচনা সভায় বলেন,  “বাজারে ফুলকপি পরীক্ষা করেও ফরমালিন পাওয়া গেছে, কিন্তু তা জাতিসংঘের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম। তাই বলে কি সব ফুলকপি ধ্বংস করে দিতে হবে?”

তবে খাদ্যে ভেজালের কারণে দেশের মানুষ নতুন নতুন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফরমালিন যাতে সহজলভ্য না হয় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ারও পরামর্শ দেন মহাপরিচালক।

‘আমারহেলথ ডটকম’ নামের একটি ওয়েব পোর্টাল আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক আলেয়া মওলা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশের মানুষের মধ্যে ফরমালিন একটি আতঙ্ক তৈরি করেছিল। মাছ, মাংস, শাক-সবজি এমনকি শিশু খাদ্যেও ফরমালিন মেশানোর প্রবণতা দেখা গেছে।”

তবে সরকার ফরমালিনসহ খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এজন্য নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

“নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের জন্য ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠন প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে এই কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, চারজন সদস্য ও একজন সদস্য সচিব নিয়োগের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে।”

তবে আইনটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “একটা বিষয় বলতে পারি, ভেজালের বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তবে শুধু আইনে সব সমস্যার সমাধান হবে না। জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে।”

ফরমালিনবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, “ফল ধ্বংস করা কোনো সুখকর দৃশ্য নয়। এটি করতে আমাদের বাধ্য করবেন না। খাদ্যকে বিষমুক্ত করতে আগামীতে আমরা আরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামব।”

কৃষক, ফড়িয়া, পাইকার, আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও ভোক্তা- সবাইকে ফরমালিন না মেশাতে এবং ফরমালিন আছে কি না তা নিশ্চিত হয়ে কেনাকাটা করতে পরামর্শ দেন তিনি।

বেনজির বলেন, “কিছু রাসায়নিক কৃষক পর‌্যায় থেকেও মেশানো হয়। সেটার দরকারও আছে। তবে কৃষক জানে না যে কী পরিমাণে মেশাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক বেশি মাত্রায় রাসায়নিক দিচ্ছে। এজন্য তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নিতে হবে।”

একইসঙ্গে ভেজাল প্রতিরোধে আলাদা একটি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।

আমারহেলথ ডটকমের সম্পাদক অপূর্ব পণ্ডিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।