ফল পাকাতে এবং তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
Published : 15 Jul 2014, 05:06 PM
জনস্বার্থে একটি মানবাধিকার সংগঠনের করা রিটে দেয়া ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।
এতে বলা হয়েছে, ফল পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে একটি ‘গাইডলাইন’ করতে হবে। এই গাইডলাইন প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাণিজ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, খাদ্য সচিব ও বিএসটিআইর ব্যবস্থপনা পরিচালককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্র বন্দরে `কেমিকাল টেস্ট ইউনিট' স্থাপন করতে হবে, যাতে আমদানি করা ফল রাসায়নিক পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো কোনো ফল দেশের প্রবেশ না করতে পারে। এনবিআর চেয়ারম্যানকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমে ফরমালিনসহ সব ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার বন্ধে রাজশাহীসহ দেশের অন্যান্য আম উৎপাদনকারী এলাকায় আমের মৌসুমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করতে বলেছে আদালত।
রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া কমিটি করে সারা বছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগার পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে, যাতে কেউ রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে ফল বিক্রি করতে না পারে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিএসটিআইর ব্যবস্থপনা পরিচালক, র্যাবের মহাপরিচালক, বিএসটিআইর পরিচালককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছে আদালত।
পাশাপাশি ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের প্রতি সার্কুলার জারি করতে পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট, যাতে এর মূল হোতাদের বিচার করা সম্ভব হয়।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের করা ওই রিটে ২০১০ সালের ১০ মে হাই কোর্ট একটি রুল দেয়।
ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চ এই রায় দেয়।
দুই বছরেরও বেশি সময় পরে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনসহ রাসায়নিক মেশানোর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে নানা মহলে আলোচনার মধ্যেই ওই রায়ের অনুলিপি মঙ্গলবার প্রকাশ করা হলো।
ফর্মালিন হলো ফর্মালডিহাইডের একটি জলীয় দ্রবণ যা টেক্সটাইল, প্লাস্টিক, কাগজ ও রঙ শিল্প এবং মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এই দ্রবণ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছ,শাকসবজি ও ফল দীর্ঘ সময় তাজা দেখাতে ফরমালিন ব্যবহার করেন।
ফরমালিনের অপব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবনের বিধান রেখে গত ৩০ জুন ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৪’ এ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।
এ আইন পাস হলে লাইসেন্স ছাড়া কেউ ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবে না। চাহিবা মাত্র লাইসেন্স প্রাপ্তরা ফরমালিনের হিসাব দেখাতে বাধ্য থাকবেন এবং নিয়মিত ফরমালিন কেনা-বেচার হিসাব রাখবেন।