ঈদে ঘরমুখো মানুষদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বেশিরভাগ মহাসড়ক মেরামতের কাজ শুরু হলেও বৃষ্টি হলেই ধুয়ে যেতে পারে সব উদ্যোগ।
Published : 14 Jul 2014, 08:51 PM
বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টি এবার হচ্ছে এবং এর মধ্যেই চলতি জুলাই মাসের শেষ দিকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
বর্ষা শুরুর পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধের হুমকিও দেন পরিবহন মালিকরা।
এরপর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরেজমিনে পরিদর্শন করে মহাসড়ক দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন। ঈদের আগে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সব মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দেন তিনি।
সে অনুযায়ী ঈদের আগে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক।
তবে তার ভয় বৃষ্টি নিয়ে, যদিও বর্ষায় বৃষ্টি হবে ধরে নিয়ে সেই প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
“অতি বর্ষণ যদি হয় তাহলে সে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে সড়ক বিভাগ, প্রতিটি অঞ্চলে ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া অতি বর্ষণে রাস্তার পানি নিষ্কাশন এবং তা মেরামতে জরুরি দল থাকবে বলেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোনো স্থানে গর্ত বা ফাটল হলে ইট-শুড়কি-বালি নিয়ে তা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করা হবে।”
“তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের কোনো হাত তো থাকে না। অতি বর্ষণ যদি ঈদের দুই দিন আগে হয় বা টানা বর্ষণ চলে, তাহলে হয়ত সমস্যা হতেও পারে, কারণ সে সময় ঠিক করার সময়টাও হয়ত পাওয়া যাবে না,” বলেন তিনি।
আবহাওয়ার অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, জুলাই মাসেও স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে।
সোমবার তিনি গাজীপুরে সড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তাগুলো সচল ও যান চলাচলের উপযোগী হবে এবং মানুষের দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করছি।”
মহাসড়কের হাল
ঈদের সময় কম-বেশি সব সড়কেই চাপ পড়ে, তবে সবচেয়ে বেশি পড়ে উত্তরাঞ্চল, চট্টগ্রাম অঞ্চল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মহাসড়কে।
বৃষ্টির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কিছু কিছু অংশে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তবে সড়ক বিভাগ ইতোমধ্যে এগুলো সংস্কারের কাজ শুরু করেছে।
মহাসড়কের ছোট দারোগা হাট, বড় দারোগা হাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস, কুমিরা বাইপাস এলাকার সড়কে সংস্কার কাজ চলতে দেখা যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক আরুণ আলো চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাসড়কটি মেরামতের জন্য ইতোমধ্যে ২০ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোতে সৃষ্ট গর্ত ভরাটের কাজ চলছে।”
উত্তরাঞ্চলের রহবল থেকে বগুড়ার চান্দাইকোনা পর্যন্ত মহাসড়কে ছোটখাটো গর্ত সৃষ্টি হলেও তা মেরামত করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সীমানায় ৭৬ কিলোমিটার মহাসড়কে বড় ধরনের কোনো সমস্যা না থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যে দুটি সেতু উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৪ জেলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেছে।
সেতু দুটি হচ্ছে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া সেতু এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ের নলকা-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রায়গঞ্জ উপজেলার নলকায় অবস্থিত নলকা সেতু।
ঈদের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ বেহাল সেতু দুটি সাময়িক মেরামত করে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।
তবে বৃষ্টিকে ভয় পাচ্ছেন সড়ক ও জনপথের সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানও।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাময়িকভাবে মেরামত করে ব্রিজ দুটি যানবাহন চলাচলের জন্য অনেকটা উপযোগী করা হয়েছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে হয়ত নতুন করে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।”
সড়ক ও জনপথের টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করা হচ্ছে। ঈদ পর্যন্ত সড়ক বিভাগের কর্মীরা মাঠে থাকবে।”
বর্ষাকাল শেষ হলে স্থায়ীভাবে সড়ক সংস্কারের কাজে হাত দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা, ভালুকা, সীডস্টোর, ত্রিশাল, বৈলর, শিকারিকান্দাসহ মহাসড়কের আরো কয়েকটি জায়গায় সড়কের এক পাশের মেরামত কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এসব স্থানে সড়কের অসংখ্য জায়গায় ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক মিন্টু চৌধুরী, গাজীপুর প্রতিনিধি আবুল হোসেন, বগুড়া প্রতিনিধি জিয়া শাহীন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ইসরাইল হোসেন বাবু, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি কে এস রহমান শফি, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি শেখ মহিউদ্দিন আহম্মদ)