নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সাত খুনে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনকারী শহীদুল ইসলামসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নিয়ে এই বাহিনীর গঠিত তদন্ত কমিটি।
Published : 02 Jun 2014, 08:00 PM
বাহিনীর তিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর র্যাব বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিয়ে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।
কমিটি গঠনের এক মাস পর সোমবার নারায়ণগঞ্জ গিয়ে নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুরসহ ছয়জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়।
অন্য পাঁচজন হলেন নজরুলের ছোট ভাই আব্দুস সালাম, ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকার বাসিন্দা সাহিদুল ইসলাম খোকা, তার মেয়ে আঁখি আক্তার এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
কাপড় ব্যবসায়ী সাহিদুল ইতোপূর্বে আদালতের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিকে বলেছিলেন, ২৭ এপ্রিল তিনি মেয়েকে নিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে দুটি গাড়ি থেকে কয়েকজনকে র্যাবের গাড়িতে তুলে নিতে দেখেছিলেন।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তদন্ত কমিটির কাছে বক্তব্য দিয়ে বেরিয়ে শহীদুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমার যা বলার, তা কমিটিকে বলে এসেছি।”
র্যাব কি একটা মানুষকে মারার জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে- এই প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে জানান নজরুলের শ্বশুর।
“আমি তাদের বলেছি, যারা টাকা খায়, মানুষ মারে? তারা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কেন, আরো বেশি সময় লাগলেও অপেক্ষা করত।”
বিভিন্ন সময় র্যাবের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি দেয়ার কথাও তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন শহীদুল।
সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেস্ট হাউজে সাক্ষ্যগ্রহণ করে র্যাবের তদন্ত কমিটি।
গত ১৭ মে একই স্থানে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির সাক্ষ্যগ্রহণের সময় গণমাধ্যমকর্মীরা ভেতরে ঢুকতে পারলেও এদিন ফটক আটকে রাখা হয়।
ফটকে থাকা প্রহরীরা জানান, র্যাবের অনুমতি ছাড়া কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিতে মানা করা হয়েছে।
অপহরণের পরপরই নজরুলের পরিবার র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন। র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ তখন সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।
৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে র্যাব এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এর মধ্যে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে এনে সামরিক বাহিনী থেকে অবসরেও পাঠানো হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- র্যাব-১০ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং র্যাব-৩ এর মেজর মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান।
এই কমিটিই সোমবার নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য নিয়েছে।
এদিকে আদালতের নির্দেশে র্যাবের সাবেক ওই তিন কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করছে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে প্রশাসনিক কমিটি গঠনের পাশাপাশি অভিযোগের মুখে থাকা র্যাবকে তদন্তের কাজে যুক্ত না করার নির্দেশ রয়েছে আদালতের। র্যাব শুধু নিজ বাহিনীর কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।