নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত খুনে র্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগসহ পুরো ঘটনা তদন্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে বলেছে হাই কোর্ট।
Published : 05 May 2014, 04:55 PM
নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম র্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা নিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ তোলার পরদিন সোমবার হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই নির্দেশ দেয়।
নজরুলের শ্বশুরের বক্তব্য নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শামীম সরকার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের নজরে আনার পর এই নির্দেশ আসে।
সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়ে এর সদস্য কারা কারা হবেন, তাও ঠিক করে দিয়েছে আদালত।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তাকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে, যার নেতৃত্ব দেবেন জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব।
এই ঘটনায় যারা সাক্ষী রয়েছেন, তাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
একই সঙ্গে র্যাবকে বিভাগীয় তদন্ত করতে বলা হয়েছে। র্যাবকে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, তারা কোনোভাবে জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ইতোমধ্যে র্যাব চার সদস্যের একটি কমিটি করেছে, যার প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদকে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এএএসএম নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “র্যাবের বিভাগীয় তদন্তে ঘটনার সময় যারা বাহিনীতে ছিল, তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। এদের কেউ বর্তমানে র্যাবে না থাকলেও অভিযোগ থাকলে তাকেও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।”
র্যাবের বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই মামলার তদন্তে এই বাহিনীকে সম্পৃক্ত না করতে বলেছে আদালত।
এই ঘটনার মামলার তদন্ত করতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাশাপাশি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডিকেও বলেছে হাই কোর্ট।
গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
লিংক রোড থেকে নজরুলদের তুলে নেয়ার সময় কয়েকজন বালু শ্রমিক র্যাব-১১ লেখা গাড়ি দেখেছিলেন বলে জানান তিনি।
সেদিন যোগাযোগ করা হলে র্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারিক সাইদ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারা কাউকে আটক করেননি এবং এই ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এর তিন দিন পর লাশ উদ্ধারের আগে র্যাব-১১ এর অধিনায়ককে প্রত্যাহার করা হয়। এই সেনা কর্মকর্তাকে সেদিনই তার বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয় বলে র্যাব জানায়।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দুটি থানার ওসিকেও প্রত্যাহার করা হয়।
নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে।
শহীদুল দাবি করেন, তারা র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও পুলিশের ‘বাধায়’ মামলায় তাদের আসামি করতে পারেননি।