নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে র‌্যাবের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখতে কমিটি

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর  নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যায় র‌্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2014, 07:52 AM
Updated : 5 May 2014, 01:22 PM

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যের এই কমিটি করা হয়েছে বলে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান জানিয়েছেন।

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজকে পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর আমরা আলোচনা করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিই। বিষয়টি তদন্ত করে অতি দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য কমিটিকে বলা হয়েছে।”

র‌্যাবের অন্য একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে এবং যারা অভিযোগ করেছেন তদন্তের স্বার্থে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” 

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং র‌্যাব-৩ এর মেজর মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

এ অপহরণ ও হত্যার জন্য র‌্যাবকে দায়ী করেছেন কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।

রোববার সাংবাদিকদের  তিনি  বলেন, আরেক কাউন্সিলর নূর হোসেন অর্থ দিয়ে র‌্যাবের মাধ্যমে তার জামাতাকে হত্যা করিয়েছেন।

নজরুল পরিবার প্রথমেই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেনের দিকে অভিযোগ তুলেছিলেন। মামলায় প্রধান আসামিও করেছিলেন তাকে।

এরমধ্যে পালিয়ে যাওয়া নূর হোসেনের কার্যালয় ক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেয়ার পর শনিবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি গাড়ি জব্দ এবং ১২ জনকে আটক করে পুলিশ।

এর সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. ইয়াসিনও জড়িত বলে দাবি করেছেন শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “নূর হোসেন ও ইয়াসিন মিয়াসহ এজাহারভুক্ত আসামিদের কাছ থেকে ৬ কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব নজরুলসহ সাত জনকে খুন করেছে।”

২৭ এপ্রিল নজরুলসহ সাতজনকে দুটি গাড়িতে তুলে নেয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালু শ্রমিকরা তাদের জানিয়েছে, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি সেখানে ছিল।

এ ঘটনা আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে জানানো হলে তার পরামর্শে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলে জানান শহীদুল।

“সিও (কমান্ডিং অফিসার) আমাকে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল।”

আগুনে জ্বলছে শিমরাইলে নূর হোসেনের কার্যালয়

সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ

এরপর র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়কসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ফতুল্লা থানায় গেলে নারায়ণগঞ্জের এসপি ও ফতুল্লা থানার ওসি তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি বলে জানান তিনি।

অপহণের পর যে দিন বিকালে নদীতে নজরুলের লাশ ভেসে ওঠেছিল, সেদিন সকালেই  র‌্যাব-১১ অধিনায়ক তারেক সাঈদ মাহমুদকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সরিয়ে আনা হয়। এই সেনা কর্মকর্তাকে  তার বাহিনীতেও ফেরত পাঠানো হয়েছে।

দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম এবং ফতুল্লা থানার ওসি আক্তার হোসাইনকে।

নারায়ণগঞ্জের আগে ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার আলী মজুমদারের বিরুদ্ধে তালসরা দরবার শরীফের ২ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছিল।

তখন র‌্যাবের বিভাগীয় তদন্তে অধিনায়ক জুলফিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরের বছর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, গ্রেপ্তারও করা হয় তাকে। সেনাবাহিনী থেকে চাকরিও হারান জুলফিকার।