আব্দুল কাদের মোল্লার আইনজীবীরা রিভিউ আবেদন ও কারাবিধির কথা বলে এলেও সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেছেন, এখন সরকার নির্দেশ দিলেই মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা যাবে।
Published : 09 Dec 2013, 05:09 PM
এই জামায়াত নেতার মৃত্যু পরোয়ানা জারির পর তার আইনজীবী ও পরিবারের বক্তব্যের মধ্যে আইনি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, “কাদের মোল্লার দণ্ডাদেশ কার্যকরের ব্যাপারে আমি প্রথম থেকে বলে আসছি, কোনো রিভিউ চলবে না। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, কারাবিধি এখানে প্রযোজ্য হবে না।
“যেহেতু ৪৭ক (২) (সংবিধানের অনুচ্ছেদ) প্রযোজ্য হবে না এবং বিশেষ আইনে বিচার হয়েছে, সেজন্য কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রোববার মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানোর পর জামায়াত নেতার প্রধান আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদনের সুযোগ পাওয়া কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার। তারা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তবে সংবিধান উদ্ধৃত করে প্রসিকিউটররা বলে আসছেন, গণহত্যাজনিত অপরাধে দণ্ডিতদের মৌলিক মানবাধিকার পাওয়ার সুযোগ নেই।
অর্থাৎ সংবিধানে বর্ণিত সব ধরনের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
একাত্তরে খুন-ধর্ষণের দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। এর বিরুদ্ধে আপিল হলে চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। গত বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের তিন দিনের মাথায় পরোয়ানা জারি করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এখানে আপিল বিভাগের রায়টি জেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করানো হয়েছে। সরকার এখন জেল কর্তৃপক্ষকে এই দণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য নির্দেশ প্রদান করবেন এবং তখনি এটা কার্যকর হবে।
“আমি মনে করি, কাদের মোল্লার রায় যে কোনদিন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।”
সরকারের আইনজীবীদের বক্তব্য, রায় কার্যকরের আগে সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন কাদের মোল্লা এবং তার সময়সীমা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকে সাত দিন।
মাহবুবে আলম বলেন, “যে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করতে পারেন। তিনি যদি করেন, ভালো কথা, সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া যাবে।
“রায়ের অনুলিপি যখন গেছে, তখন নিশ্চয়ই তাকে জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উনি তো কালকেই করতে (ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন) পারতেন। তিনি কবে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করবেন, তার জন্য তো আমাদের রাষ্ট্র বসে থাকবে না।”
মৃত্যু পরোয়ানা জারির পরদিন সকাল থেকে কাদের মোল্লার পরিবার ও আইনজীবীদের বিভিন্ন তৎপরতা দেখা যায় সুপ্রিম কোর্টে। জামায়াত নেতার স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ জানান, আইনজীবীরাও বিভিন্ন কথা বলেন।
সাক্ষী মোমেনা বেগম ‘ভুয়া’ বলে কাদের মোল্লার স্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিচার যখন শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে, প্রথম থেকেই তো তারা নানা রকম কথা বলে আসছে। যে এই কাদের কসাই কাদের না ইত্যাদি।
“কাজেই তাদের তো প্রথমে থেকেই যে উদ্দেশ্য ও বক্তব্য, সেটা এই প্রক্রিয়াটাকে ভণ্ডুল করা। তারা যা খুশি বলছে, এগুলো সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটাকে (যুদ্ধাপরোধের বিচার) বিতর্কিত করতে করা হচ্ছে।”
“সর্বোচ্চ আদালত মোমেনা বেগমের সাক্ষ্যকে পর্যালোচনা করেই একটা সিদ্ধান্তে এসেছেন। তারপর এই সাক্ষী সম্পর্কে কিছু বলা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং আইনের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল এটা বাজে কথা। এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই।”
মাহবুবে আলম বলেন, “ট্রাইব্যুনাল একটি রায় দিয়েছেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছিল, আমরাও আপিল করেছিলাম এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একটি রায় দিয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা কোনোমতেই সমীচীন নয়।”
ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা পাঠাতে পারে না বলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যেরও জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
“কোনোদিনই সর্বোচ্চ আদালত থেকে মৃত্যু পরোয়ানা যায় না। অর্ডারটা (দণ্ডাদেশ কার্যকরের) যাবে সরকারের তরফ থেকে। ট্রাইব্যুনালের রায়টি বাতিল করে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সেই কথাটিই জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে জানানো ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন মনে করেছে। তারা সেটাই জানিয়েছেন।”