সাক্ষী মোমেনা ‘ভুয়া’, দাবি কাদের মোল্লার স্ত্রীর

যার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, সেই মোমেনা বেগম ‘ভুয়া’ সাক্ষী বলে দাবি করেছেন জামায়াত নেতার স্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2013, 10:33 AM
Updated : 10 Dec 2013, 12:50 PM

একাত্তরে খুন-ধর্ষণের দায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা জারির পরদিন সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেন সানোয়ারা জাহান।  তার সঙ্গে ছেলে হাসান জামিল ও মেয়ে আমানাতুন পারভীনও ছিলেন।

এর আগে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে আসামির আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন,  যার অপরাধের কথা বলা হচ্ছে, সেই কাদের মোল্লা আর জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের  দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিল হলে চূড়ান্ত রায়ে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।

মামলার ষষ্ঠ অভিযোগে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, যাতে একাত্তরের ২৬ মার্চ মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা এবং এক মেয়েকে ধর্ষণের বর্ণনা ছিল।

হযরত আলীর মেয়ে ধর্ষিত মোমেনার জবানবন্দির ভিত্তিতে কাদের মোল্লাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয় বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা জানান।

সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সম্মেলনে সানোয়ারা জাহান বলেন, “মোমেনা বেগম আদালতে সাক্ষী দিতেই আসেননি। ক্যামেরা ট্রায়ালের নামে গোপন বিচারে ভুয়া একজন মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে আদালতে বক্তব্য দেয়ানো হয়েছে।

“কিন্তু পরবর্তীতে জল্লাদখানায় সংরক্ষিত প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি দেখে আমাদের আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন, আদালতে সাক্ষ্য দেয়া মোমেনা বেগম প্রকৃত মোমেনা বেগম ছিলেন না।”

কাদের মোল্লার স্ত্রী বলেন, “এই রকম একজন ভুয়া সাক্ষীর তিন জায়গায় প্রদত্ত তিন রকমের বক্তব্যের পরে শুধু তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।”

এই জালিয়াতির তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এটি একটি ভুল রায়। আমরা মনে করি, সংবিধান প্রদত্ত রিভিউয়ের সুযোগ পেলে সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়গুলো তুলে ধরার মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় পাল্টে যাওয়া সম্ভব।”

গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর আব্দুল কাদের মোল্লা (ফাইল ছবি)

কাদের মোল্লার স্ত্রীর আগে তার আইনজীবীরাও আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনার আবেদন জানানোর কথা বলেছেন।

তবে প্রসিকিউটররা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সাংবিধানিক এই অধিকার প্রযোজ্য হবে না।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ ধারা তুলে ধরছেন  প্রসিকিউটররা। এ ধারা অনুযায়ী, গণহত্যাজনিত অপরাধে দণ্ডিতদের মৌলিক মানবাধিকার পাওয়ার সুযোগ নেই।

অর্থাৎ সংবিধানে বর্ণিত সব ধরনের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।

কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকরে তড়িঘড়ি চলছে অভিযোগ করে তার স্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি সংবিধান স্বীকৃত রিভিউ এর অধিকার না দিয়ে এবং জেল কোডের বিধান অনুসরণ না করে তড়িঘড়ি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যে চেষ্টা করা হচ্ছে, তা শুধু অবৈধই নয়, তা সার্বজনীন মানবাধিকারের ন্যূনতম পরিপন্থি।”