ফেলানী হত্যা: বিএসএফ সদস্য ‘নির্দোষ’

কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষ ‘নির্দোষ’ বলে রায় দিয়েছে বাহিনীর বিশেষ আদালত।

ভারত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Sept 2013, 10:30 AM
Updated : 3 July 2015, 05:08 AM

বিএসএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এই রায় বাহিনীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এই খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ন্যায় বিচার চাই।”

নুরুল ইসলাম নিজেও ভরতে গিয়ে বিএসএফের আদালতে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আর ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন বলছেন, বিএসএফের মহাপরিচালক এই রায়কে অনুমোদন দিলে তা হবে ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’। এতো বিএসএফের বেপরোয়া মনোভাব আরো উৎসাহিত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ওই রায়ে বলা হয়, বিএসএফ ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের হাবিলদার অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আদালত পায়নি।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি। তবে অফিশিয়ালি আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমার তাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি।”

বিএসএফের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহাপরিচালকের সিদ্ধান্তের পর আমরা রায়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারব।  

অবশ্য বৃহস্পতিবার রায়ের পর হাবিলদার অমিয় ঘোষকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে পঞ্চদশী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের এক জওয়ান।

ফেলানীর বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম ১০ বছর ধরে দিল্লিতে কাজ করতেন। তার সঙ্গে সেখানেই থাকতো ফেলানী।

দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর। এতে ভয়ে সে চিৎকার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়।

কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়।

ফেলানীর কবরের পাশে বাবা ও মা

এরপর গত ১৩ অগাস্ট ভারতের কোচবিহার জেলায় সোনারি বি এস এফ ছাউনিতে অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয়। পাঁচজন বিচারক এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। আর আদালত পরিচালনা করেন বি এস এফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডি আই জি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদী।

অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বি এস এফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ ভারতে গিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ফেলানীর বাবা।

কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন এ মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন। তাদের সঙ্গে বিজিবি-৪৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল হক খালেদও ভারতে যান মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে আব্রাহাম লিংকন বলেন, “এটি ছিল এক বিএসএফ সদস্যের বিরুদ্ধে ভারত সরকারের মামলা। বিএসএফ আইনে বিশেষ আদালতে এই বিচারকাজ চলে। কাজেই আপিল করতে হলে ভারতকেই করতে হবে। ফেলানীর বাবা অথবা আমাদের পক্ষে আপিল করার সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ সরকার বা ভারতের জনগণ আপিল করার জন্য ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”    

এই আইনজীবী বলেন, বিএসএফের মহাপরিচালক এই রায়কে অনুমোদন দিলে একটি নৃশংস হত্যাকে ‘আইনি বৈধতা’ দেয়া হবে। 

রায়ের এই খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে পশ্চিমবঙ্গের একটি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও। 

কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা  সুরক্ষা মঞ্চের (মাসুম)  সেক্রেটারি কিরিটি রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএফএফ সীমান্তে কেবল ত্রাসের রাজত্বই কয়েম করেনি, বিচারের নামে নাটকও সাজিয়েছে।”  

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায়ই বিএসএফের গুলিতে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা ঘটলেও কোনো সীমান্তরক্ষীর বিচারের মুখোমুখী হওয়ার ঘটনা এই প্রথম।