Published : 14 Jul 2013, 05:56 AM
ট্রাইব্যুনালে গোলাম আযম
রোববার বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ রায়ের জন্য এই দিন রাখে। এর আগে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
ট্রাইব্যুনালে এর আগে যুদ্ধাপরাধের চারটি মামলার রায় হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে। দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
তৃতীয় রায়ে দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং চতুর্থ রায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা আশা করছেন, এই মামলায় অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারায় গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে।
রোববার রায়ের তারিখ জানিয়ে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, “গোলাম আযমের বয়স বিবেচনার করার কথা আলোচনায় থাকলেও আমরা বারবার বলেছি, আজকের বয়োবৃদ্ধ গোলাম আযমের বিচার হচ্ছে না, বিচার হচ্ছে ১৯৭১ সালে ৪৭ বছর বয়সী গোলাম আযমের। আমরা তাই সবসময় তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছি।”
অন্যদিকে গোলাম আযমের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “তার বিরুদ্ধে ৬১টি ঘটনায় ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা, হত্যা ও উস্কানিসহ পাঁচ ধরনের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন। কিন্তু কোনো অপরাধেই তার সংশ্লিষ্টতা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা আশা করছি আগামীকাল রায়ে তিনি সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।”
তিনি জানান, গোলাম আযম ‘অসুস্থ থাকায়’ রায় ঘোষণার সময় তাকে ট্রাইব্যুনালে না আনার জন্য আবেদন করা হয়েছিল ট্রাইব্যুনালে। তবে বিচারক বলেছে, কারা কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে যে গোলাম আযমকে হাজির করা সম্ভব নয়, তাহলে তারা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
গত ১৭ এপ্রিল এ মামলায় দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “একাত্তরে গোলাম আযম সমস্ত অপরাধীদের ‘লাইটহাউজ’ হিসেবে কাজ করেছেন।”
অন্যদিকে গোলাম আযমের আইনজীবী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “প্রসিকিউশন শুধু অভিযোগই করেছে, কিন্তু যুক্তিতর্কে তা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই সর্বোচ্চ সাজা তো দূরের কথা, এক মিনিটের সাজাও হতে পারে না বলে আমরা মনে করি।”
গোলাম আযমের পক্ষে মোট ১২ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা ১১ কার্যদিবসে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন।
এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হলেও গোলাম আযমের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন কেবল তার ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।
পাঁচ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬১টি ঘটনায় গত বছরের ১৩ মে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র, সহযোগিতা, উস্কানি ও হত্যাযজ্ঞে বাধা না দেওয়া এবং নির্যাতন চালানোর অভিযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী গোলাম আযম ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন, যাদের সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।
১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
১৯৭১ থেকে ৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা। ১৯৯৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমিরের পদ থেকে অবসরে গেলেও দলটির ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে তিনি সম্পৃক্ততা বজায় রাখেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে বিচারকরা তাকে কারাগারে পাঠান। তখন থেকেই তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে রাখা হয়েছে।