চট্টগ্রামে রেলের ৪৮ লাখ টাকার দরপত্র নিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গোলাগুলিতে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
Published : 24 Jun 2013, 02:52 PM
সোমবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর সিআরবি সাতরাস্তার মোড়ে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় সদরদপ্তরের সামনে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এই সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় ১২৭ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এই সহসম্পাদককে সংঘর্ষের সময় এক পক্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নিহতরা হলেন স্থানীয় সিআরবি বস্তির আরমান হোসেন (৮) ও সাজু পালিত (২৪)।
আরমানের মা আছিয়া বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আরমান দুপুরে খেলতে বেরিয়ে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সাজু পালিত নগরীর লাভলেনের মৃত কানু পালিতের ছেলে। তিনি সাতরাস্তার মোড়ে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজামউদ্দীন জানান, ফেনী রেলস্টেশনের সংস্কার কাজের ৪৮ লাখ টাকার টেন্ডার জমা দেয়া নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় উভয়পক্ষ প্রায় ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মাথায় গুলিবিদ্ধ সাজুকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান যুবলীগ নেতা দিদারুল আলমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েল অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষে একটি পক্ষ দরপ্রস্তাব জমা দিতে যায়।
কিন্তু কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এতে বাধা দেয় বলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা তারেকুর রহমান দাবি করেন।
দিদারুল আলমের অনুসারী তারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কথা কাটাকাটি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বাবরের লোকজন গুলি শুরু করে।
বাবরের অনুসারীদের মধ্যে অজিত, খোকন তাপী, পিন্টু, ছোটন ও অমিত নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ করেন তারেক।
দিদারুল আলম চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাসির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বাবর নগর আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচিত।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজামউদ্দীন জানান, সংঘর্ষের পরপরই নগরীর সিআরবি ও নন্দনকানন এলাকায় অভিযান চালিয়ে লিমনসহ ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
থানার ওসি এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ সংলগ্ন মেলা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে এক পক্ষের ১৯ জন এবং নন্দনকানন এলাকার বাহাদুর নার্সারির সামনে থেকে অন্য পক্ষের ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে লিমন ছাড়াও রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জমির উদ্দিন, কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসমত আলী রাসেল।
এরা সবাই দিদারুল আলমের অনুসারী। বাকি ২১ জনের সবাই বাবরের অনুসারী।
রাত পর্যন্ত আরো ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের সবাই যুব ও ছাত্রলীগের কর্মী।
রাতে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক মহিবুর রহমান বাদি হয়ে দাঙ্গা ও হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করেন।
পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে যাদের নাম রয়েছে, তাদের ৩৫ জন পলাতক রয়েছেন বলে জানান তিনি। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে হত্যাকাণ্ড ও সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দরপত্র নিয়ে সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ পাহারা ছিলো কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যেখানে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছিলো, সেখানে পুলিশ ছিলো। কিন্তু সংঘর্ষ হয়েছে বাইরে। আর হঠাৎ করেই সংঘর্ষ শুরু হয়।”
“এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে এবং যারাই দোষী তাদের সকলকেই ধরা হবে,” বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা লিমনকে সংঘর্ষের সময় একপক্ষের নেতৃত্ব দিতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
তবে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে সংগঠনের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম দুপুরে এক বিবৃতিতে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরে ছাত্রলীগের কোনো পর্যায়ের কমিটি নেই।
“সেখানে কোনো পর্যায়ে কাজ করার জন্যও সংগঠনের পক্ষ থেকে কাউকে নির্দেশ দেয়া হয়নি।”
তবে বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিমনকে বহিষ্কারের কথা জানায় ছাত্রলীগ।
এতে বলা হয়, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য লিমনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।