বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের আগের রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে ডজন খানেক গাড়িতে, বোমা বিস্ফোরণও ঘটেছে।
Published : 06 Mar 2013, 04:59 PM
বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি হরতাল ডাকার পরপরই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় এই ঘটনাগুলো ঘটে। গাজীপুরে রাতে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের গাড়িতে বোমা ছোড়া হয়েছে। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন।
সরকারি হামলায় সমাবেশ পণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি দেশজুড়ে বৃহস্পতিবার এই হরতাল ডেকেছে বিএনপি। কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে হরতাল ডাকে জামায়াত।
ঢাকা: রাত ৮টার দিকে বংশালের নর্থ সাউথ রোডে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এসএস পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। রাত ৯টার দিকে ওই এলাকায় তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে বলেও জানান বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল হাসান।
বিজয় সরণীর কাছে এলেনবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকশ গজের মধ্যে একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
গাবতলী মাজার রোড, সায়েদাবাদ, কাকরাইল ও বঙ্গবাজারেও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও মহাখালী, তেজগাঁওসহ কয়েকটি স্থানে হাতবোমার বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
ময়মনসিংহ: ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা।
ময়মনসিংহ রেলওয়ের পরিবহন পরিদর্শক হামিদুল ইসলাম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রেনটি গফরগাঁও রেল স্টেশন ছাড়ার সময় দুর্বৃত্তরা জানালা দিয়ে আগুন দেয়। তবে যাত্রীদের প্রচেষ্টায় কিছুক্ষণের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ সময় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে এক নারী যাত্রী আহত হন বলেও জানান তিনি।
এছাড়া সন্ধ্যার পর হরতাল সমর্থকরা জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাসে আগুনসহ কমপক্ষে ১৫টি ট্রাক-মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশা ভাংচুর করে।
গাজীপুর: রাত পৌনে ১২টার দিকে টঙ্গীতে সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের গাড়িতে হাতবোমা ছোড়া হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন।
টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে রাসেলের গাড়িতে দুটি বোমা ছুড়ে মারা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ওই সময় সামনে তিনি কার্যালয়ের সামনে নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উড়াল সেতুর ওপর থেকে হাতবোমা দুটি ছোড়া হয়। একটি বোমা গাড়ির পাশে বস্ফোরিত হয়, অন্যটি অবিস্ফোরিত থাকে।
সাংসদ জাহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিএনপি- জামায়াত জোটের দুষ্কৃতকারীরাই এই হামলা করেছে। হরতালের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে তারা মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছে।”
রাত সোয়া ৯টার দিকে দেওয়ানগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেন রেলাইনে আগুনের কারণে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আটকে থাকে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার জিয়া উদ্দিন সরদার বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক ভুরুলিয়া এলাকায় কাঠ জড়ো করে লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন অপসারণের পর ট্রেনটি যাত্রা করে।
তার আগে জেলা শহরের রাণী বিলাসমনি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পল্লী বিদ্যুতের স্টাফ বাস এবং শিববাড়ি এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
শ্রীপুরের রাজাবাড়ি এলাকায় সন্ধ্যায় হরতালের সমর্থনে মিছিল থেকে কিশোরগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-কাপাসিয়া সড়কে চলাচলকারী ১৪-১৫টি বাস ভাংচুর হয়।
এতে চালকরা ওই সড়কে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা পর পুলিশের তৎপরতায় গাড়ি চলাচল শুরু হয় বলে জানান শ্রীপুর থানার ওসি মো. আমির হোসেন।
এছাড়া বিকালে শহরের রাজবাড়ী রোডে কালীগঞ্জ থানা বিএনপির একটি মিছিলের পেছনে দুটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
চট্টগ্রাম: রাত পৌনে ১০টার দিকে নগরীর একে খান গেইট এলাকায় বাসে এবং টাইগার পাস এলাকায় ট্রাকে আগুন দেয়া হয়।
সিলেটে: রাতে মহানগরীর আম্বরখানা ও জিন্দাবাজার এলাকায় হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে আম্বরখানা এলাকায় ৪/৫টি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।এর এক ঘণ্টা পর জিন্দাবাজার এলাকায় আরো দু’তিনটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বরিশাল: রাতে একাধিক স্থানে গাড়িতে ভাংচুর চালিয়ে আগুন দিয়েছে ছাত্রদলকর্মীরা। এক ইউএনও’র গাড়িও হামলাকারীদের কবলে পড়ে।
এছাড়া বনি আমিন নামে এক ছাত্রলীগকর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজা মিয়া বলেন, নগরীর একরামপুর এলাকা অতিক্রমকালে তার গাড়ির সামনের গ্লাসে ইট মেরে ভেঙে দেয়া হয়।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীতে একটি ট্রাক ও একটি ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সায় আগুন দেয় ছাত্রদলকর্মীরা। এছাড়া বিভিন্নস্থানে বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের কাঁচ ভাংচুর করে তারা।
ফরিদপুর: রাত পৌনে ৮টার দিকে শহরের নিলটুলী এলাকার মুজিব সড়কে একটি বাটা সু কোম্পানির গাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
এর কিছুক্ষণ আগে শহরের সুপার মার্কেটের সামনে বিকট শব্দে একটি হাতবোমা বিস্ফোরিত হলে লোকজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে।
ফেনী: বিজিবির একটি মালবাহী গাড়িসহ ১০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে বিএনপিকর্মীরা।
ফেনী মডেল থানার এসআই মোহাম্মদ সোলায়মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৫টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ চলাকালে বাহিরে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরপরই ভাংচুর শুরু করে।
বিজিবি’র ট্রাক ছাড়াও পাঁচটি অটোরিকশা, চারটি পিকআপ ভ্যান ভাংচুর হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক কাউন্সিলরসহ ১০ জনকে আটক করেছে।
সুনামগঞ্জ: রাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের আউশা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী মিনিবাসে আগুন দেয়া হয়।
বগুড়ায় আবার ১৪৪ ধারা
বগুড়ার সাতমাথা, খান্দার, চারমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-বিএনপির সহিংসতার কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কায় বুধবার রাত ১২ টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া,শাজাহানপুর,গাবতলী,শিবগঞ্জ ও শেরপুর উপজেলায়ও পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সারোয়ার মাহমুদ জানান, পরবর্তী নিদের্শ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি বলবৎ থাকবে।
সাম্প্রতিক সংঘাতের পর পরিস্থিতির উন্নতি হলে মঙ্গলবার রাতে ১৪৪ ধারা তুলে নেয়া হয়েছিল। ফের হরতাল ডাকার পর নতুন করে তা বলবৎ করা হল।