প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই ভারতের ঋণের অর্থ দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কেনা হবে।
Published : 11 Apr 2017, 09:54 PM
ভারত সফরে ‘তৃপ্ত’ প্রধানমন্ত্রী
২০০১’র ভোটে ‘র’ ভূমিকা ভারতও স্বীকার করে: হাসিনা
কোন দেশ থেকে কী অস্ত্র-সরঞ্জাম কেনা হবে সে সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নেবে জানিয়ে তিনি বলছেন, এক্ষেত্রে ঋণদাতা দেশের কোনো শর্ত থাকছে না।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে শনিবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের জন্য ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা ঘোষণা করেন, যার ৫০ কোটি ডলার প্রতিরক্ষা খাতে কেনাকাটায়।
এই সফরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যার মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক সইয়ের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি বলছে, এর মধ্য দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করার মতো জায়গায় উপনীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এটা করেছে বলে অভিযোগ দলটির।
তাদের ওই অভিযোগ নাকচ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা কথা মনে রাখবেন- যেখানে আমি আছি, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কিছু হবে-এটা অন্তত কখনো আমি বেঁচে থাকতে হবে না।
“বাংলাদেশের সার্বিক স্বার্থ বজায় রেখেই যা করার তা করব।”
আর কোন কোন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক আছে এবং কোন কোন দেশের সঙ্গে এটা করা হবে তার তালিকা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বন্ধুকে চিনি না। আর যাদের সাথে যুদ্ধ করলাম… যারা আমাদের বিরোধিতা করল, তাদের সাথে করতে আমাদের বাধে না। তখন প্রশ্ন ওঠে না।
“যারা আমাদের সহযোগিতা করল, তাদের সাথে করলে প্রশ্ন ওঠে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, তাদের সাথে চুক্তি করে ফেললেও প্রশ্ন ওঠে না।”
এক শতাংশ সুদে ২০ বছরের জন্য সামরিক খাতে ভারত থেকে এই ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই টাকায় বাংলাদেশের নিজের সিদ্ধান্তে যে কোনো দেশ থেকে অস্ত্র কেনা যাবে।
“আমরা যে ডিফেন্স পারচেজ করব, সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নেব, আমরা কী কী কিনব। এখানে আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত। তাদের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। আমরাই সিদ্ধান্ত নেব, আমরা কী কী আনব।
“আমরা কোন দেশ থেকে কী কিনব, এখানে কোনো বাইন্ডিং নাই।”
ভারতকে বন্ধুপ্রতীম দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সরাসরি সহযোগিতা করেছে। সেখানে একটা সমঝোতা স্মারক করতে এত প্রশ্ন কেন আসে?”
বিশ্বের সব দেশ থেকেই বাংলাদেশ ‘কিছু না কিছু’ কেনে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমনকি অনেক কিছু পাকিস্তান থেকে কিনি।”
তিনি জানান, চীন, ফ্রান্স, বেলারুশ, কুয়েত, রশিয়া, তুরস্ক- এই ছয়টি দেশের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি আছে।
এর বাইরে বাহরাইন, কানাডা, চেক প্রজাতন্ত্র, ইতালি, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, ফিলিস্তিন, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই প্রক্রিয়াধীন আছে।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী জোট ক্ষমতায় থাকতে ২০০২ সালে চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “চীনের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তিটা কবে হয়েছিল, কখন হয়েছিল, সেই চুক্তিতে কী আছে, আপনারা সাংবাদিকরা কেউ সেটা জানেন?
এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা চুপ করে থাকলে তিনি বলেন, “জানেন না।”
“যারা এখন চুক্তি নিয়ে খুব বেশি কথা বলে, তারাই তো গোপনে এই চুক্তিটা করে এসেছিল। এই প্রশ্ন তাহলে বিএনপি তোলে কীভাবে?”
ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা রূপরেখায় দুই দেশের সামরিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ, আলোচনা, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি সম্বলিত অনুষ্ঠান উদযাপন, দুই দেশের সামরিক সদস্যদের শিক্ষা সফর, সামরিক প্রশিক্ষক ও পর্যবেক্ষক বিনিময়, সামরিক সরঞ্জাম সংরক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক পর্যবেক্ষক, ক্রীড়া ও দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, চিকিৎসা সহযোগিতা, দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ, স্টাফ পর্যায়ে বার্ষিক আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় টহলের কথা বলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “এটা নিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করছে, নানা কথা বলছে, তারা বলবেই। তাদের চরিত্র আমার জানা আছে।”
তিনি বলেন, “যখন যেখান থেকে সুবিধা মতো হয়, সে দেশ থেকে আমরা কিনি। তাই এটা নিয়ে এত প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে কি না জানি না।”
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে দেড় হাজারেরও বেশি ভারতীয় সৈন্যের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এটা তো ঠিক, আমাদের দেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর অবদান রয়েছে। অনেক জীবন দিয়েছে তারা।”
প্রতিরক্ষা চুক্তির যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আজকে স্বাধীন দেশ, যথেষ্ট শক্তিশালী করে আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তুলেছি। জ্ঞানের শেষ নেই, শিক্ষার শেষ নেই, প্রশিক্ষণের শেষ নেই।
“আমাদের দেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কিন্তু সমঝোতা প্রতিবেশী দেশের সাথে অবশ্যই হবে। সকল বন্ধুপ্রতীম দেশের সাথে এই রকম সম্পর্ক থাকে।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ডিফেন্স কলেজে বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আসার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তুরস্কের সাথে ১৯৮১ সালে প্রথম প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার আমলে অনেক করা হয়ে গেছে।”