নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা মাইনুল ইসলাম মুসাই রাজধানীর পূর্ব আশকোনার সূর্যভিলা ভাড়া করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Published : 25 Dec 2016, 05:53 PM
গুলশান হামলাসহ জঙ্গিদের নানা অভিযান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মুসার অস্ত্রও শনিবার অভিযানের সময় পাওয়া গেছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
নব্য জেএমবির এই শীর্ষনেতাকে অনেক দিন ধরেই খুঁজছে পুলিশ। আশকোনায় অভিযানে তার স্ত্রী ও মেয়েকে পাওয়ার পর এখন তার তথ্য পেতে পুরস্কার ঘোষণার পরিকল্পনাও চলছে।
বছরের মাঝামাঝিতে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলার পর জঙ্গিদের নানা আস্তানায় অভিযানের ধারাবাহিকতায় পূর্ব আশকোনার সূর্যভিলা নামে বাড়িটির সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়েকে নিয়ে মুসার স্ত্রী ধরা দেন পুলিশের কাছে। তার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন মিরপুরে গত ২ সেপ্টেম্বর আরেক অভিযানে নিহত সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও মেয়ে।
আত্মসমর্পণের সময় তারা একটি পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড গুলি পুলিশের হাতে জমা দেন বলে ডিএমপি কমিশনার মো আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছিলেন।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সূর্যভিলায় যে অস্ত্র নিয়ে মেজর জাহিদের স্ত্রী আত্মসমর্পণ করেছে, সেটি সংগ্রহ করেছে মুসা।”
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী ও জাহিদুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর নব্য জেএমবির হাল ধরার পর্যায়ে রয়েছেন মুসা।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইমতিয়াজ নামে মুসাই পূর্ব আশকোনায় সূর্যভিলা ভাড়া নিয়েছিলেন।
“নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে সে একটি নকল ভিজিটিং কার্ডও তৈরি করেছিল। বাসা ভাড়ার সময় তিনি যে ছবি দিয়েছিলেন, সেটিও অনেক পুরনো।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষনেতা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদের সঙ্গে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে একটি বাসায় অবস্থান করছিলেন।
গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বাগমারার রঘুপাড়ায় ১৯৮৮ সালের ২০ ডিসেম্বর আবুল কালাম ও মা সুফিয়ার ঘরে জন্ম নেওয়া মুসা রাজশাহীতেই এক সময় জেএমবির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাগমারায় উত্থান ঘটেছিল জঙ্গিনেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের। পরে তাকে বিচারক হত্যামামলায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
মুসা ঢাকা কলেজ থেকে ২০১১ সালে ইংরেজিতে স্নাতক ও ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন বলে গোয়েন্দারা জানান।
তারা বলছেন, উত্তরার একটি স্কুলে ইংরেজির শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন মুসা। ২০১৪ সালে দূর সম্পর্কের এক খালাত বোনকে বিয়ে করেন তিনি। এ বছরের শুরুতে তাদের একটি সন্তান হয়।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কথা মুসা আগে থেকে জানতেন। দুই মাস আগে তাকে ধরতে পুলিশ রাজশাহীতে গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে পায়নি।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান বলেন, “সে (মুসা) বাংলাদেশেই আছে। আমরা চেষ্টা করছি তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য।”
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, মুসার ছবি প্রকাশ করে তাকে গ্রেপ্তারে সহায়তার জন্য পুরস্কার ঘোষণার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
আশকোনার বাড়ি থেকে আত্মসমর্পণকারী মুসার স্ত্রীসহ চারজন বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রয়েছেন।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তা মান্নান বলেন, সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে এই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটা মামলা দায়ের করা হবে।
ওই বাড়িতে অভিযানের সময় আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যান এক কিশোর ও এক নারী। এক কিশোর গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে অভিযানে নিহত নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলে।