মাত্র ৬৩ হাজার ভোটার নিয়ে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদে ভোটের আয়োজনে পরিচালনা খাতেই সোয়া ৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করছে নির্বাচন কমিশনের।
Published : 16 Dec 2016, 12:03 PM
এর সঙ্গে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যয় যোগ হলে মোট খরচ আরও বাড়বে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইসির বাজেট শাখার উপ সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থ ছাড় দিচ্ছেন তারা।
আর বাজেট শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনামুল হক বলেন, “নির্বাচনে পরিচালনা খাতেই সোয়া ৫ কোটি টাকার বেশি বাজেট ধরা হয়েছে। পরে আইন শৃঙ্খলাখাতের ব্যয় যুক্ত হবে।”
ইসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনী সামগ্রী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের পারিশ্রমিকসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩২ হাজার টাকা। আর নির্বাহী হাকিম ও বিচারিক হাকিমদের দায়িত্ব পালনের জন্য এক কোটি টাকার টাকার বেশি বাজেট রাখা হয়েছে।
আগামী ২৮ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদে ভোট হবে। নির্বাচন ঘিরে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ দিনের জন্য ৯১ জন নির্বাহী হাকিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া ভোটের সময় চার দিন ৯১ জন বিচারিক হাকিম থাকবেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর মোবাইল-স্ট্রাইকিং ফোর্সে। তাদের দায়ত্ব পালনের সময় জ্বালানি, আপ্যায়নসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরে কোটি টাকার বাজেট ঠিক করা হয়েছে।
ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও যথাসময়ে নিয়োজিত থাকবে।”
>> ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার ৬১ জেলায় আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতাদের প্রশাসক নিয়োগ দেয়। অনির্বাচিত এই প্রশাসকদের মেয়াদ শেষেই ডিসেম্বরে নির্বাচন হচ্ছে।
>> সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন হলেও জেলা পরিষদ আইনে প্রত্যক্ষ ভোটের বিধান নেই।
>> আইন অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
>> সব মিলিয়ে ৬৩ হাজার ১৪৩ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ জন পুরুষ; নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদে ৩০০ আসনে নির্বাচন করতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লাগে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর বাকি অর্ধেক এলাকায় ভোট করতেই ২৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
সেই বিচারে ৬১ জেলায় ভোট করতে সোয়া ৫ কোটি টাকা ব্যয় ‘স্বাভাবিক’ বলেই তারা মনে করছেন।
আয়োজন
# ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পরিষদে ওয়ার্ডভিত্তিক কেন্দ্রে ভোট চলবে।
# প্রতিটি জেলা পরিষদকে ১৫টি সাধারণ ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদাভাবে একটি করে ভোটকক্ষ থাকবে।
# ৬১ জেলায় ৯১৫টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৩০৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। সেই হিসাবে ভোটকেন্দ্র থাকছে ৯১৫টি ও ভোটকক্ষ থাকছে ১৮৩০টি।
# তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান, ১৫ জন করে সাধারণ ও পাঁচজন করে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন এই ভোটের মাধ্যমে।
# চেয়ারম্যান পদে ইতোমধ্যে ২২ জেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বর্জনের মধ্যেও বাকি ৩৯ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১২৪ জন প্রার্থী।
# সাধারণ সদস্য পদে ২৯৮৬ জন ও সংরক্ষিত (নারী) সদস্য পদে ৮০৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। সাধারণ সদস্য ১৩৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের ব্যয় প্রায় ৬ কোটি টাকা
ইসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব এনামুল হক জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে, যা গত নির্বাচনের চেয়ে প্রায় এক কোটি টাকা বেশি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ায় ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে গেছে বলে ইসির উপ সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানিয়েছেন।
দলভিত্তিক প্রথম এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি এলেও তা করছে না ইসি। আইন শৃঙ্খলায় পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপিসহ আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অন্য সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। ইতোমধ্যে নির্বাহী হাকিমরা ২৭টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে ভোটের আগে ২০ ডিসেম্বর থেকে নিয়োজিত থাকবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। তারা অবস্থান করবেন ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি, একটি ভালো নির্বাচন উপহার দিতে পারব আমরা।”
এ নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ সদস্য পদে ১৫৬ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৩৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।