চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
Published : 14 Oct 2016, 08:26 PM
‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক
চীন-বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি
অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তে চীন-বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র সচিব
চীনা প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
চীনের সঙ্গে সংসদীয় সম্পর্ক বাড়াতে চান স্পিকার
শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে চীনা প্রেসিডেন্ট শিং জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদ এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন পরে বৈঠকের বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আমাদের অনুরোধ থাকবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের বাজারে বাংলাদেশের সব পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
“চীনের প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে বলেছেন, তার দেশে যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায় সে বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।”
বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, পঞ্চাশের দশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা শুরু হয়। চীনা প্রেসডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ‘সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা’র সেই সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায়’ পৌঁছে যাবে বলে তিনি ‘বিশ্বাস’ করেন।
বঙ্গভবনের কেবিনেট হলে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, চীনের যেমন ‘চাইনিজ ড্রিম’ আছে বাংলাদেশেরও আছে ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’।
চীনকে বাংলাদেশের ‘বড় ব্যবসায়িক অংশীদার’ অভিহিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং টেলি যোগাযোগে চীনের সহযোগিতাকে বাংলাদেশ মূল্য দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়লেও দুই দেশের বাণিজ্যে এখনও বড় ঘাটতি রয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে ৮০ কোটি ডলারের পণ্য চীনে পাঠিয়েছে, সেখানে আমদানি করেছে ৯৬৫ কোটি ডলারের পণ্য।
প্রেস সচিব জানান, চীনা প্রেসিডেন্ট শি ছয় বছর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফরের কথা বৈঠকে স্মরণ করেন এবং এই সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশংসা করেন।
“বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে শি জিনপিং বলেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪১ বছর চলছে। দুই দেশের দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে।”
অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন চীনের প্রেসিডেন্ট।
প্রেস সচিব বলেন, উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দেন শি জিনপিং।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে ছিলেন।
দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে শি জিনপিং তার সন্মানে আবদুল হামিদের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভোজে উপস্থিত ছিলেন।
দুই দিনের সফরে সকালে ঢাকা পৌঁছান চীনের প্রেসিডেন্ট। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি হামিদ।
বিকালে শি জিনপিং ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। পরে তাদের উপস্থিতিতে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়, ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন তারা।
১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা এসেছেন শি, যে দলে ক্ষমতানীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন।
শনিবার সকালে সাভারে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। পরে ভারতের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।