‘সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা’র সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার’ জায়গায় নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন।
Published : 14 Oct 2016, 07:08 PM
চীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইলেন রাষ্ট্রপতি
অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্তে চীন-বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র সচিব
চীনা প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ
চীনের সঙ্গে সংসদীয় সম্পর্ক বাড়াতে চান স্পিকার
চীনের ‘ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগ বাস্তবায়নে একসঙ্গে এগোনোর পাশাপাশি নৌ যোগাযোগ ও সন্ত্রাস দমনের মতো বিষয়গুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার বিষয়েও দুই দেশের মতৈক্য হয়েছে।
ঢাকা সফররত চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যুক্ত বিবৃতিতে এই মতৈক্যের ঘোষণা আসে।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হয়, ছয়টি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন তারা।
এর মধ্য দিয়ে সহযোগিতার ‘একটি উচ্চতর ভিত্তি’ তৈরি হল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সহযোগিতা জোরদারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”
শি জিনপিং বলেন, “আমরা চীন, বাংলাদেশ সম্পর্ককে ঘনিষ্ঠ সর্বাত্মক অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ক্ষেত্র থেকে কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতায় উন্নীত করতে একমত হয়েছি। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ে মত বিনিময় এবং কৌশলগত যোগাযোগে সম্মত হয়েছি, যাতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি উচ্চতর পর্যায়ের দিকে অগ্রসর হয়।”
বাংলাদেশকে চীনের ‘ভালো প্রতিবেশী, ভালো বন্ধু ও ভালো অংশীদার’ অভিহিত করেন তিনি।
তিন দশক পর চীনের কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে সকালে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসেন শি জিনপিং। তার এই সফরকে ঐতিহাসিক বলেছে দুই দেশই।
শি বলেন, “চীন, বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন একটি নতুন ঐতিহাসিক সূচনা বিন্দুতে এবং একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।
“পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল এবং একে অন্যকে সমর্থন করে এমন বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। এবং কৌশলগত সহযোগিতায় নতুনত্ব আনতেও চীন প্রস্তুত।”
এ প্রক্রিয়ায় চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতা জনগণের জন্য আরও সুফল বয়ে আনবে এবং এ অঞ্চলের শান্তি, স্থিতি ও উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট শি।
“আমাদের উন্নয়ন কৌশলসমূহের মধ্যে সঙ্গতি তৈরি, যৌথভাবে ওয়ান-বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগ নিয়ে এগোনো, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদারে চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং অবকাঠামো, উৎপাদন সক্ষমতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, আইসিটি ও
তিনি বলেন, অর্থ, প্রযুক্তিগত ও মানবসম্পদ সহায়তার ক্ষেত্রে চীন তার ‘সর্বোচ্চটা করে যাবে’। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার লক্ষ্যে বড় প্রকল্পে ‘আরও সহায়তা’ দেবে চীন।
২০১৭ সালকে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বিনিময়ের বছর হিসেবে চিহ্নিত করতে উভয়পক্ষের মতৈক্যের কথা জানিয়ে শি বলেন, “আমাদের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিতে অনেক বর্নিল আয়োজন থাকবে এ সময়।”
বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার) অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নে যৌথভাবে এগোনোর পাশাপাশি অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে যোগাযোগ ও সমন্বয় বৃদ্ধির বিষয়েও মতৈক্য হওয়ার কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বিবৃতিতে ‘এক চীন নীতি’সহ দেশটির প্রধান স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে ঢাকার সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়গুলোতে একে অন্যকে সমর্থনের বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।”
বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, “আজ আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সাল নাগাদ জ্ঞানভিত্তিক মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া।”
দুই দিনের সফরে বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা পৌঁছান প্রেসিডেন্ট শি। এরপর লো মেরিডিয়ান হোটেলে কিছু সময় কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান তিনি।
প্রেসিডেন্ট শি বিকাল ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল কক্ষে একান্ত বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা।
১৯৮৬ সালে লি শিয়ানইয়ানের পর প্রথম চীনা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন শি জিনপিং।
১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে রয়েছে, যে দলে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ছাড়াও কয়েকজন মন্ত্রী রয়েছেন।
তার সঙ্গে ঢাকায় এসেছে ৮৬ সদস্যের চীনা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। বিকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের বৈঠকে ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ১৯টি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিকালে বিমানবন্দর সড়কে লো মেরিডিয়ান হোটেলে ফেরেন চীনা প্রেসিডেন্ট। সেখানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তিনি সাক্ষাৎ দেন।
পরে সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নৈশভোজে যোগ দেন।
শনিবার সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন প্রেসিডেন্ট শি। এরপর গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি।