হোম
+
ঢাকার দুই এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ছয় ‘সদস্যকে’ গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, এরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও ধর্ম নিরপেক্ষ মতাদর্শের ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনায় ছিল।
Published : 17 Feb 2016, 06:38 PM
মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানার জিন্দাবাহার পার্ক ও উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশে উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) মারুফ হোসেন সরদার জানান।
এরা হলেন- সাজ্জাদুল আলম মুক্তি (৪৬), মেসবাহ উর রহমান প্রদীপ (৩৭), বাশার (৩৭), আশরাফ (৩৫), আজিজুর রহমান ওরফে বাবু (৩৬) ও শফিকুর রহমান পলাশ ওরফে বিজয় (৩৫)।
তাদের কাছ থেকে সংগঠনের প্রচারপত্র, উগ্রবাদী বই, নোট, একটি ল্যাপটপ ও জিহাদি বই উদ্ধারের কথা জানিয়ে মারুফ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।”
গ্রেপ্তারদের মধ্যে প্রদীপ কুষ্টিয়ার মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চালক। আর সাজ্জাদুল আলম মুক্তিকে হুজির কুষ্টিয়া অঞ্চলের কমান্ডার বলছে পুলিশ।
পুলিশের জঙ্গি দমন ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “পুলিশের কাছে গোপন খবর আসে যে পুরান ঢাকায় জিন্দাবাহার পার্কে হুজি সদস্যরা মিটিং করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।”
পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও পুলিশ সেখান থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরার মাস্কট প্লাজার সামনে থেকে আজিুর রহমান ও শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল বলেন, “তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে, দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে ও সেকুলার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।”
এই হরকাতুল জিহাদই ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে ১০ জনকে হত্যা করেছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তারা হত্যার চেষ্টা করেছে একাধিকবার।
“নতুন করে সংগঠিত হয়ে তারা আগের মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিজেদের উপস্থিতির বার্তা দিতে চেয়েছিল,” বলেন মনিরুল।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার এই ছয়জনের সবাই বোমা বানাতে পারদর্শী। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল জানান, এই ছয়জন আগে কখনও গ্রেপ্তার হননি। তাদের বিরুদ্ধে দেশের কোথাও পুরনো মামলা রয়েছে কিনা- তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
গত শতকের শেষভাগে বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদের উগ্র সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমের বিস্তার ঘটার পর ২০০৫ সালে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে সরকার।
গত সাত বছরে হুজি সদস্যরা দেশে যেসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, তাতে অন্তত ১০১ জন নিহত ও ছয় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
এসব ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মুফতি আবদুল হান্নানের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে একাধিক মামলায়।
স্বজনদের ভিন্ন দাবি
হুজি সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে কুষ্টিয়ার তিনজনের পরিবার দাবি করেছে, পুলিশের মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে।
মুক্তি, প্রদীপ ও বাশারকে এক সপ্তাহ আগেই ধরে নেওয়া হয়েছিল বলে তাদের দাবি।
পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মী প্রদীপ সংযুক্তিতে মিরপুর ফায়ার সার্ভিসের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত। মুক্তি কুষ্টিয়া লাহিনি মাধ্যমিক স্কুলের গণিত শিক্ষক এবং বাশার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। তিনি কুষ্টিয়ার নগর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদের ইমাম। ওই মসজিদের পাশেই একটি কক্ষে থাকতেন।
মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে অফিস থেকে প্রদীপকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রদীপের কাজকর্মে জঙ্গি মনে হয়নি বলে জানান তিনি।
মুক্তিকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে কুষ্টিয়া শহরের আমলা পাড়ার বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে তার স্ত্রী নাসরীন আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন।
তিনি বলেন, “নিজ বাসায় অবস্থানকালে মুক্তিকে আটক করা হলেও ঢাকাতে নেওয়ার পর পুলিশ যে বক্তব্য দিয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এজাতীয় হীন তথ্যপ্রদান গোটা পুলিশ বিভাগের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাছাড়া আটককৃত ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করার নিয়ম থাকলেও তারা সেটা করেনি। বরং এই এক সপ্তাহ ধরে আমাদের আতঙ্ক ও ভীতিকর অবস্থায় রেখেছিল।”
লাহিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মুক্তি স্কুলে অনুপস্থিত। তিনি শুনেছেন যে পুলিশ তাকে আটক করেছে।
“মুক্তির দৈনন্দিন চাল-চলন ও আচরণে কখনও মনে হয়নি যে, সে কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্যকলাপে লিপ্ত থাকতে পারেন।”
বাশারের বিষয়ে নগর মোহাম্মদপুর মসজিদের মুয়াজ্জিন জেহের আলী বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজ শেষে মসজিদ প্রাঙ্গণে গ্রামবাসীর সামনেই তাকে আটক করেছিল পুলিশ।
তাদের এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম।
