ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে পরিমলের যাবজ্জীবন

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তারই শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 08:07 AM
Updated : 25 Nov 2015, 06:59 PM

মামলা হওয়ার চার বছর পর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক মো. সালেহ উদ্দিন বুধবার আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি পরিমলকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা দিতে না পারলে আরও ছয় মাস সাজা খাটতে হবে তাকে।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি ফোরকান মিয়া জানান, জরিমানা টাকা ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীকে দিতে বলেছে আদালত।

৩০ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শোনানোর সময় বিচারক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন ও মাহবুবে খোদা এ মামলায় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ‘চরম গাফিলতি’ দেখিয়েছেন।

রায়ের পর আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পরিমল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য বিচারক যে রায় দিয়েছেন সে ব্যাপারে আমি আর কী বলতে পারি? আমি নির্দোষ। আর কিছু বলতে আমার হাত-পা বাঁধা।”

তার আইনজীবী মাহফুজ মিয়া জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

রাজধানীর খ্যাতনামা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা ক্যাম্পাসের শিক্ষক পরিমলই ছিলেন এ মামলার একমাত্র আসামি। আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন তিনি।

গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার লাটেংগা গ্রামের পরিমল ২০১০ সালে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখায় বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

২০১১ সালে করা মামলায় ভিকারুননিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ হোসনে আরা এবং বসুন্ধরা শাখার প্রধান লুৎফর রহমানকে আসামি করেছিলেন ধর্ষিত ছাত্রীরা বাবা। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ আদালতে অভিযোগ গঠনের সময় অধ্যক্ষ ও লুৎফরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে ২০১১ সালের ২৮ মে প্রথম ধর্ষণ করেন পরিমল। ওই সময় ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও চিত্র মোবাইলে ধারণ করা হয়। এরপর ওই ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ১৭ জুন আবারও ধর্ষণ করা হয়।

বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর ভিকারুননিসার ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন পরিমলকে বরখাস্ত করে।

এরপর ৫ জুলাই ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা দায়ের করেন।

এর একদিন বাদে পরিমলকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে তার স্ত্রীর বড় বোনের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি।

মামলার শুনানিতে বিচারকের কাছে ওই ছাত্রী পরিমলের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী জিল্লুর রহমান তালুকদার জানান।

২৮ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় আসামির সাজার আদেশ দেন বিচারক। এই ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই সর্বোচ্চ সাজা।

হাসিখুশি পরিমল

রায় দেওয়ার আগে ও পরে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো পরিমলের মুখে ছিল হাসি। রায় শুনেও তাকে উদ্বিগ্ন কিংবা বিমর্ষ মনে হয়নি।

রায়ের পর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে পরিমল জয়ধরকে

রায়ের দেওয়ার আগে ও পরে সাংবাদিকেদের সঙ্গে কথা বলার সময় পরিমলের আইনজীবী মাহফুজ মিয়া তাকে হাসতে নিষেধ করেন।

মাহফুজ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

যাবজ্জীবন করাদণ্ডের রায়ের পর তিনি এজলাসে নিজেই বলে ওঠেন- “মিডিয়ার চাপ, রায় এর চেয়ে আর কি আশা করা যায়।”

এই আইনজীবী বলেন, “ভিডিও চিত্রের কথা মামলার বিভিন্ন কাগজপত্রে উল্লেখ করা হলেও কোনো ভিডিওচিত্র আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা। এজাহারে কোথাও মেয়েটির বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেননি।

“ধর্ষণের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও সন্দেহযুক্ত। এ সন্দেহের সুযোগ অর্থাৎ বেনিফিট অব ডাউট আসামি পাবে। আর রাষ্ট্রপক্ষের বেশ কয়েজন সাক্ষী জেরার উত্তরে বলেছে, কোচিং সেন্টারের দরজা সবসময়ই খোলা থাকত। আর সহপাঠীরা কোচিং পড়ত ব্যাচ ধরে।”

“সুতরাং উচ্চ আদালত অবশ্যই এই আবেগের রায় উল্টে দেবেন বলে আমি মনে করি,” বলেন পরিমলের আইনজীবী।

পরিমলের বাবার দাবি ‘ষড়যন্ত্র’

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় পরিমলের বাবা ক্ষিতিশ জয়ধর গোপালগঞ্জে সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ছেলে নির্দোষ। আমরা সুবিচার পাইনি। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

এই বৃদ্ধের দাবি, তার ছেলেকে ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো’ হয়েছে।

ক্ষিতিশের তিন ছেলের মধ্যে সবার বড় পরিমল এক সন্তানের জনক।

লাটেঙ্গা গ্রামের কমল বৈদ্য বলেন, এলাকায় পরিমলকে মেধাবী ও ভদ্র ছেলে হিসেবে চিনতেন তারা। কোনো অভিযোগের কথা শোনেননি।