যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোরও যাচাই-বাছাইও শেষে আদালতে গ্রেপ্তারদের নিলেও অধিকাংশ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও আদায় করা যায়নি।
সর্বশেষ শনিবার রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফিন দীপনকে তার নিজ অফিসে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
তার কয়েক ঘণ্টা আগে শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলের লালমাটিয়ার অফিসের তাকেসহ ব্লগার সুদীপ কুমার বর্মণ ও তারেক রহিমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া আহতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রবেশপথে তল্লাশি চালু ও মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহারের নির্দেশনাও দেন তিনি।
এরআগে গত ৭ অগাস্ট শুক্রবার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে বাসাবোর ভাড়া বাসায় দুপুরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায় ঘাতকরা।
ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যা মামলায় পরবর্তীতে চার জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তার চার জনের মধ্যে গত ১৪ অগাষ্ট সাদ আল নাহিন এবং মাসুদ রানাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
গোয়েন্দা পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ ঘটনায় অপর দুই আসামি কামাল হোসেন সরদার এবং কাউসার হোসেন খানকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”
এদের মধ্যে সাদ আল নাহিন শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। তিনি ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন হত্যা চেষ্টা মামলার এজহারভুক্ত আসামিও।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলার বাইরে টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। একই সময় ঘাতকদের কোপে আঙ্গুল হারান তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মাথায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে খুন হন ওয়াশিকুর রহমান বাবু, যিনি অভিজিতের মতোই ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন।
আর গত ১২ মে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তমনার ব্লগার ও সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিজিৎ হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে শফিউর রহমান ফারাবি নামে যে ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তার কাছ থেকে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি, আদালতেও কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি সে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মাশরুকুর রহমান খালেদ সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “অভিজিৎ হত্যার দিন সেই এলাকায় থাকা পুলিশের ভিডিও ফুটেজ দেখে সাত জনকে শনাক্ত করে তাদের ছবি সংগ্রহ করতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু তাদের কোন বিস্তারিত পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।”
‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ায় খুনিদের চিহ্নিত করতে সময় লাগছে বলে পুলিশের দাবি।
ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পর পরই জনতার হাতে ধরা পড়া জিকরুল্লাহ ও আরিফুল নামে দুই মাদ্রাসাছাত্রের কাছ থেকেও উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি বলে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেন।
তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ওই দুই জনের সঙ্গে আবু তাহের ও মাসুম নামে দুই জনকে আসামি করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (পশ্চিম) মো.সাজ্জাদুর রহমান এ ঘটনার অগ্রগতি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবু হত্যার আগে যাত্রাবাড়ি থেকে অস্ত্রসহ আবু তাহের ওরফে সাইফুল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
“পরে সাইফুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যা পরিকল্পনায় জড়িত ৩/৪ জনের নাম বলেছে। নামগুলো আসল নাকি ছদ্মনাম তা যাচাই বাছাই করছে গোয়েন্দারা।”
আর ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনায় ইদ্রিস আলী (২৪) নামে এক আলোকচিত্র সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রথমে ইদ্রিস আলী সিআইডিকে জানিয়েছিল সে অনন্ত হত্যার দিন ঘটনাস্থলেই যায়নি। পরে অবশ্য সে স্বীকার করেছে ঘটনার দিন উনি ওইখানেই উপস্থিত ছিল।
“ইদ্রিস সিআইডিকে কিছু তথ্য দিয়েছে। তার দেওয়া কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকরও মনে হয়েছে। তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।”
“উগ্রপন্থি জঙ্গিরা অনন্তকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ অনেকটাই নিশ্চিত। কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করা শেষে হত্যা মামলা রহস্য উদঘাটন হয়ে যাবে।”
‘তদন্তের স্বার্থে’ সিআইডি কী তথ্য পেয়েছে তা জানাতে রাজি হননি পুলিশ কর্মকর্তা মির্জা আবদুল্লাহহেল বাকি।