পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের উপর হামলার সঙ্গে দুদিন আগে গাবতলীতে এএসআই খুনের যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশ প্রধান।
Published : 24 Oct 2015, 11:39 AM
“এটা পূর্বপরিকল্পিত একটা নাশকতা। তারা দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে চায়,” বলেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক।
নাজিম উদ্দিন রোডে হোসাইনী দালানে শনিবার ভোররাতে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলায় আহতদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
শিয়া সম্প্রদায়ের উপর এই হামলায় সাজ্জাদ হোসেন সানজু নামে এক কিশোর নিহত হয়, আহত হয় অর্ধশতাধিক।
আহতদের নয়জন শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন, তাদের দেখতে যান পুলিশ প্রধান।
গত বৃহস্পতিবার গাবতলীতে পুলিশের একটি তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে নিহত হন এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা।
তখন ঘটনাস্থল থেকে মাসুদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা শুক্রবার জানিয়েছিল পুলিশ।
আইজিপি বলছেন, কামরাঙ্গীরচরে পাওয়া বিস্ফোরক এবং ইমামবাড়ার বিস্ফোরকে মিল আছে।
ইমামবাড়ায় তিনটি বোমা বিস্ফোরণের পর টেপে মোড়ানো বোমাসদৃশ দুই/তিনটি বস্তু পুলিশকে উদ্ধার করতে দেখেছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
“গ্রেপ্তার মাসুদের তথ্য অনুয়ায়ী, এই পরিকল্পনা বগুড়ায়ই হয়েছে,” বলেন শহীদুল হক।
গাবতলীতে পুলিশকে ছুরিকাঘাতের সময় গ্রেপ্তার মাসুদ ও তার সঙ্গীরা বগুড়া থেকে ঢাকা এসেছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
আশুরা উপলক্ষে ভোররাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি নিলেও বোমা হামলার পর তা বের হয়নি। তবে প্রতিবারের মতো শনিবার সকালে বের হয়েছে তাজিয়া মিছিল।
তাজিয়া মিছিল ঘিরে পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্মকমিশনার কৃষ্ণপদ রায়ও ছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ককটেল বাইরে থেকে ছোড়া হয়নি। অপরাধীরা ভেতরেই ছিল।”
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল হাসান ভোররাতে বলেছিলেন, “ককটেল জাতীয় হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।”
শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। দুটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।
সাইফুল ইসলাম নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হোসায়েনী দালান চত্বরে পরপর তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন তিনি।
ওই সময় রাতের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। বোমা হামলায় রাতের অনুষ্ঠান পণ্ড হলেও ভয় কাটিয়ে শনিবার সকালে মিছিলের জন্য ইমামবাড়ায় ভিড় জমান শিয়ারা।
প্রায় ১৫০০ বছর আগের কারাবালার ঘটনা স্মরণ করে সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় তাজিয়া মিছিল। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়, যাতে মাতম ছিল ‘হায় হোসেন-হায় হোসেন’।
ভয় না পেয়ে হামলাকারীদের জবাব দিতেই মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান আব্দুল জব্বার নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি।
কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে মনে করেন- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ইয়াজিদের বংশধরেরা এই হামলা চালিয়েছে। ইমাম হোসেনকে যারা হত্যা করেছিল, তারা এখনও আছে।”
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের (রা.) শহীদ দিবস আরবি মহররম মাসের ১০ তারিখকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করেন শিয়া মতাবলম্বীরা।
সপ্তম শতকে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন ইমাম হোসেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে মুয়াবিয়াপুত্র ইয়াজিদ ইমাম হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন।