স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে যেভাবে জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছিল, সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
Published : 15 Aug 2015, 10:52 AM
শনিবার জাতীয় শোক দিবসে বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের কবরে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ বলেন, “১৫ অগাস্ট ইতিহাসের কালো দিন, কলঙ্কের দিন। বাংলাদেশে যেন এ রকম কিছু আর না ঘটে। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।”
সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার পর বনানী কবরস্থানে যান আশরাফসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে এক আলোচনা সভায় তিন দিন আগে আশরাফ বঙ্গবন্ধুকন্যা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের আভাস দিয়ে একই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন।
১৫ অগাস্টের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, “তখনও আমাদের দল ক্ষমতায় ছিল। তাহলে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা তখন কোথায় ছিল? তখন কি আমাদের কোনো ব্যর্থতা ছিল না?”
“মাঝে মাঝে আমি আতঙ্কিত হই। বহু শক্তি আছে, মঙ্গল হোক সেটা চায় না,” বলেছিলেন তিনি।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী আশরাফ বনানী কবরস্থানে সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার সব রকম প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
“যতক্ষণ পর্যন্ত একজন খুনিরও বিচারের রায় কার্যকর বাকি থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ আবেদন খারিজ হলে পরদিন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি সাতজনের মধ্যে এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়।
মোসলেমউদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবর। আর আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও আব্দুল মাজেদ অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন দেশে আছেন। আব্দুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা গেছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসের নৃশংস এই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আবাসিক একান্ত সহকারী মহিতুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের করেন। সে বছরের ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জাতীয় সংসদে বিলোপ করা হয়।
পরের বছরের ১৫ জানুয়ারি এ হত্যাকাণ্ডে ১৯ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দীর্ঘ ১৪৯ দিন সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর ২০০০ সালের ২৮ জুন হাই কোর্টে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ‘ডেথ রেফারেন্স’ ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। ২৮ নভেম্বর শুনানি শেষে ১৪ ডিসেম্বর হাই কোর্টের দুই বিচারপতি দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন। পরের বছর ৩০ এপ্রিল তৃতীয় একক বিচারপতি ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
কিন্তু এই রায় সে সময় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে হাই কোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।
দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৯ সালের ৭ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়।
ওই বছর ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ হাই কোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করে।