ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়কে হত্যা করতে খুনিরা সময় নিয়েছিল মাত্র ১০ মিনিট; সংখ্যায় ছিল চার জন।
Published : 08 Aug 2015, 01:20 AM
পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর রোডের ১৬৭ নম্বর বাসা। শুক্রবার দুপুরে এই বাসারই পাঁচতলায় খুন হন ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়।
ভবনের মালিক মো. শামসুল কবিরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিলয় তার স্ত্রী আশা মনিকে নিয়ে দুই বছর আগে বাসাটিতে ওঠেন। দুই কক্ষের বাসাটির ভাড়া ছিল ছয় হাজার টাকা।
তবে ঘটনার সময় বাসাতে ছিলেন নেত্রকোনা থেকে বৃহস্পতিবার বেড়াতে আসা আশা মনির ছোট বোন ইশরাত তন্বীও। আশা ও তন্বীকে বারান্দায় আটকে রেখে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
গোড়ান টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় নিলয়দের বাসায় যেতে সময় লাগে অন্তত ১০ মিনিট। পাশেই শাহী মসজিদ ও ঝিলপাড় মসজিদ। দোকানপাটও আছে বেশ কয়েকটি।
সন্ধ্যায় ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিলয়ের শোবার ঘরে মাটিতে জমাট বাঁধা রক্ত। দেয়ালেও রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। পুরো ঘর এলোমেলো। সেখানে একটি বড় খাট, স্টিলের আলমিরা, কাঠের শেলফ ও তার পাশে ছোট একটি চৌকি। বড় খাটটির পাশে পড়ে আছে ছোট একটি বাজারের ব্যাগ।
শোবার ঘরের পাশে বেশ ছোট একটা জায়গা- সেখানে একটি ড্রেসিংটেবিল ও তার পাশেই রান্না ঘর। ভাত ও আলু ও করলা ভাজি রান্না করা ছিল সেখানে।
আশা মনি জানিয়েছেন, সকালে নাস্তা না করেই মাসের বাজার করে বাসায় ফিরেছিলেন নীলাদ্রি।
রান্না ঘরের চুলার অন্তত আট ফিট উল্টো দিকে একটি দরজা। এর ওপাশে একটি ছোট বারান্দা। নিলয় ছাড়া যারা ওই ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকেন তারা ওই বারান্দা ব্যবহার করতেন।
নিলয়কে কুপিয়ে হত্যার সময় ওই বারান্দায়ে তন্বীকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। বললেন, চিৎকার করেও মানুষের সাড়া পাওয়া যায়নি।
হত্যাকাণ্ডে খুনিরা মাত্র ১০ মিনিটের মতো সময় নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তন্বী ও আশা।
তারা জানান, সংখ্যায় তারা ছিল চার জন; দেখে ছাত্র বলেই মনে হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ছিলেন হালকা গড়নের ফর্সা মতো।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তন্বী বলেন, “দুপুরের পর হঠাৎ দরজার কড়া নাড়েন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক। তাকে দেখে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনে হচ্ছিল। তার পরনে ছিল গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট। কাঁধে ছিল একটি ব্যাগ।
“আপা ওকে বলেছিল ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলেন। এরপর দুলাভাইকে গিয়ে লোকটাকে চলে যেতে বলার জন্য পাঠান।”
ওই সময় নিলয় ল্যাপটপে কাজ করছিল বলেও জানান তন্বী।
“দুলাভাই উঠে যুবকটিকে কিছু বলতে যাবেন ঠিক এমন সময় তিনজন লোক হুড়মুড় করে বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা আমাকে একটা কালো বন্দুক দেখিয়ে বলে কোন কথা বলবি না বলে বারান্দায় আটকে ফেলে। এরপর কে যে বারান্দার দরজা খুলে দেয় মনে নাই।”
তন্বীর সঙ্গে কথা বলার সময় পাশের বাসায় বিলাপ করতে দেখা যায় আশা মনিকে।
বারবার চিৎকার করে তিনি বলছিলেন, “এত্ত চিৎকার করলাম ভাই। ওকে বাঁচাতে কেউ আগায়ে আসলো না। আমি দাঁড়িওয়ালা লোকটার পায়ে পরছিলাম। নিলয়ের প্রাণ ভিক্ষা চাইছিলাম। আমার চুল ধরে ওই লোক বারান্দায় বন্দি করে রেখেছিল। ওদের মনে দয়া মায়া বলে কিছু নেই।”
নিলয় যে বাসায় খুন হয়েছেন সেটিতে কোনো দারোয়ান ছিল না।
ভবনের মালিক মালিক মো. শামসুল কবির জানান, তাদের এলাকার বেশির ভাগ বাসায়ই দারোয়ান নেই। তার বাসাটিতেও দারোয়ান ছিল না।