ইতালি উপকূলে নৌকাডুবি: শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যুর শঙ্কা

অন্তত ৬৩ জনের মৃতদেহ মিলেছে, তাদের অনেকেই পাকিস্তানের নাগরিক। ৮০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 05:52 AM
Updated : 28 Feb 2023, 05:52 AM

ইতালির দক্ষিণের উপকূলে নৌকা ডুবে শিশুসহ শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নৌকাডুবির ওই ঘটনায় অন্তত ৬৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

নিহতদের মধ্যে ১২টি শিশুও রয়েছে।

রোববার ক্রোতোনের কাছে তীরে ওঠার চেষ্টা করার সময় ভেঙে পড়া নৌকাটি দুইশর মতো লোককে বহন করছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি নৌকায় করে অভিবাসন প্রত্যাশীদের এমন চোরাগোপ্তা যাত্রা ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

দিনকয়েক আগে তুরস্ক থেকে যাত্রা করা নৌকাটিতে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইরাক ও ইরানের নাগরিকরা ছিলেন বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাজে আবহাওয়ার কারণে পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর অভিবাসন প্রত্যাশীদের ওই নৌকাটি ডুবে যায় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে। কালাব্রিয়া অঞ্চলে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে থাকা একটি রিসোর্টের সৈকত থেকে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইতালির কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, ৮০ জনকে জীবিত পাওয়া গেছে।

“এদের মধ্যে তারাও আছে, যারা নৌকা ডুবে যাওয়ার পর সাঁতরে তীরে আসতে পেরেছেন,” বলেছে তারা।

জীবিত উদ্ধার একজনকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলেছে শুল্ক পুলিশ।

নৌকাটিতে যারা ছিলেন, তাদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সোমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, নিহতদের মধ্যে দুই ডজনের বেশিই পাকিস্তানের নাগরিক বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইসোলা দি কাপো রিজুতো শহরের অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে থাকা জীবিতদের অনেককেই কোনো কথা বলা ছাড়াই কাঁদতে দেখা গেছে, কম্বলে শরীর মোড়ানো কেউ কেবল শূন্যে তাকিয়ে আছেন।

“তারা ভয়াবহ ট্রমাটাইজড হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো শিশু তাদের পুরো পরিবার হারিয়ে ফেলেছে। আমরা যা যা পারছি, সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি,” বলেছেন মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারসের সের্গিও দি দাতো।

১৬ বছর বয়সী এক আফগান বালকের পাশেই সমুদ্রতীরে তার ২৮ বছর বয়সী বোন মারা গেছে’ কিন্তু একথা বাবা-মাকে বলার মতো সাহস, শক্তি নেই তার।

৪৩ বছর বয়সী আরেক আফগানের সঙ্গে কেবল তার ১৪ বছর বয়সী ছেলেই বেঁচে আছে। স্ত্রী, ১৩, ৯ আর ৫ বছর বয়সী বাকি তিন সন্তান বাঁচেনি। স্বামী হারানো এক আফগান নারী কেবল কাঁদছেনই, তাকে তীর থেকে সরানো যাচ্ছে না।

“আমাদের তীরে আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল। এটা মনে করিয়ে দিচ্ছে, সমগ্র ভূমধ্যসাগরই এখন একটি বড় গণকবর, যা লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, এই সংখ্যা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে,” বলেছেন ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিযান চালানো বেসরকারি সংস্থা এসওএস মেডিটেরিয়ানের ফ্রান্সেসকো ক্রিয়াজ্জো।

“শেষ দেখা যাচ্ছে না। ২০১৩ সালে লাম্পেদুসায় ছোট একটি সাদা কফিন দেখে লোকজন বলেছিল, ‘আর নয়’, ২০১৫ সালে তীরে পড়ে থাকা দুই বছর বয়সী এক শিশুর প্রাণহীন শরীরের সামনে আবারও তারা বলেছিল, ‘আর নয়’।

“কিন্তু এখন ‘আর নয়’ কথাটা আর কেউ উচ্চারণও করে না। আমরা খালি শুনি ‘আর যেন কেউ যাত্রা না করে’, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে লোকজন এ ধরনের যাত্রা করেই যাচ্ছে, মরছেও,” বলেছেন তিনি।