বিবিসির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ ভারতের আয়কর বিভাগের

তিন দিন ধরে দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে অভিযান চলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2023, 06:48 PM
Updated : 17 Feb 2023, 06:48 PM

ভারতে বিবিসির দুই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নথিপত্র ঘেঁটে আয়কর বিষয়ে অসংগতির প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির আয়কর কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই ভারতের দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসির কার্যালয়ে হানা দেন কর কর্মকর্তারা। তিনদিন ধরে দিনরাত সেখানে অবস্থান করে চলেছে তল্লাশি অভিযান।

শুক্রবার আয়কর বিভাগের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে সরাসরি বিবিসির নাম উল্লেখ না করে প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ের হিসাবে অসংগতি পাওয়ার দাবি করা হয় বলে জানায় বিবিসি।

এ বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা আয়কর বিভাগকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং যদি আয়কর কর্মকর্তারা কোনো বিষয়ে সরাসরি যোগযোগ করতে চান তাহলেও সাড়া দেওয়া হবে।

ভারতে আয়কর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়, একটি প্রথমসারির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কোম্পানি, যারা হিন্দি, ইংরেজি এবং ভারতের আরো কয়েকটি ভাষায় কনটেন্ট তৈরি করে তাদের দিল্লি ও মুম্বা্ইয়ের কার্যালয়ে তারা ‘জরিপ’ চালিয়েছে।

‘‘জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগ থেকে আয় ও মুনাফার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে সেটা ভারতের প্রচলিত আয়কর ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

‘‘যা ইঙ্গিত করে যে, নির্দিষ্ট কিছু আয়ের উপর কর দেওয়া হয়নি। একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা ভারতে তাদের আয়ের পরিপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেনি।”

আয়কর বিভাগ গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ওই অভিযান শুরু করে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় অভিযান শেষ হয়। অভিযান শেষে হলে ওইদিন রাতেই বিবিসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা ভয় না পেয়ে পক্ষপাত মুক্ত থেকে সংবাদ পরিবেশন করে যাবে। তারা স্বাধীন ও বিশ্বস্ত। তারা দৃঢ়ভাবে তাদের সাংবাদিক ও কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাদের মঙ্গলই প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার। সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সহযোগিতা করে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিবিসি’র বিতর্কিত তথ্যচিত্র যুক্তরাজ্যে সম্প্রচারের কয়েক সপ্তাহ পর এ অভিযান চালানো হয়।

ওই তথ্যচিত্রে ২০০২ সালে ভারতের গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার ঘটনায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই সময় মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ শিরোনামের ওই তথ্যচিত্র ভারতে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে মোদী সরকার।

তথ্যচিত্রটিকে কেন্দ্র করে ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়েছে। ভারতজুড়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে এ তথ্যচিত্র।

তথ্যচিত্রটি বিতর্কিত কাহিনী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বানানো ‘অপপ্রচার’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে ভারত সরকার।

ফলে তথ্যচিত্রটি কেবল যুক্তরাজ্যের টিভিতে সম্প্রচারিত হলেও ভারত সরকার স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ ঠেকানোর চেষ্টা করেছে।

সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্যচিত্রটি তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। টুইটার, ইউটিউবকেও এ সংক্রান্ত সব টুইট এবং ভিডিও মুছে ফেলতে বলা হয়।

এ নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়। বিরোধীরা বিভিন্ন জায়গায় সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে। ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তথ্যচিত্রটি দেখায়। তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।

গতমাসে দিল্লি পুলিশ তথ্যচিত্র দেখতে জড়ো হওয়া ছাত্রদেরকে গ্রেপ্তারও করেছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে তথ্যচিত্র সম্প্রচারের প্রতিশোধ নিতেই বিবিসি দপ্তরে আয়কর কর্মকর্তারা হানা- এমন কথা অস্বীকার করেছেন ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা। আয়কর বিভাগও এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি বা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে লভ্যাংশের আদানপ্রদান এবং অন্যান্য আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছে না বিবিসি। এজন্য বিবিসি কর্তৃপক্ষকে নোটিশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তারা কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি।

এর প্রেক্ষিতেই আয়কর আইন অনুযায়ী এই জরিপ। এটি কোনও তল্লাশি অভিযান নয়। এ ধরনের সমীক্ষা নিয়মিত করা হয়। এর সঙ্গে তল্লাশি বা অভিযানকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।

ভারতে সম্প্রতি কয়েকবছরে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আয়কর কর্মকর্তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের মুখে পড়তে হয়েছে।

তবে বিবিসি তে যে তল্লাশি অভিযান চলছে তার সমালোচনা করেছে কয়েকটি গণমাধ্যম সংগঠন এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী।

Also Read: বিবিসি’র দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে আয়কর কর্মকর্তাদের তল্লাশি

Also Read: বিবিসির দিল্লি-মুম্বাই কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মত কর কর্মকর্তাদের অভিযান

Also Read: মোদী তথ্যচিত্র ‘ব্লক’ করার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন মাস্ক