যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অ্যাসাঞ্জকে এখন বেলমার্শ কারাগারে পুরোপুরি আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
Published : 11 Oct 2022, 02:07 PM
যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক নথি ও কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের দেহে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অ্যাসাঞ্জকে এখন বেলমার্শ কারাগারে পুরোপুরি আইসোলেশনে রাখা হয়েছে, সোমবার অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা মরিস এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে রুশ গণমাধ্যম আরটি।
“তার (অ্যাসাঞ্জ) স্বাস্থ্যের জন্য সামনের কয়েকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে এখন তার কক্ষে ২৪ ঘণ্টা তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়েছে,” সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন চলতি বছরের মার্চে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্টেলা।
পেশায় আইনজীবী এ নারী জানান, কাশি ও জ্বর নিয়ে শুক্রবার অসুস্থ হয়ে পড়েন অ্যাসাঞ্জ; কোভিড শনাক্তকরণ পরীক্ষার আগে তাকে প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভোগা অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত অ্যাসাঞ্জ ২০২০ সালের শুরুর দিকে জামিনের আবেদন জানালেও সেসময় তা প্রত্যাখ্যাত হয়।
ফুসফুসের জটিলতার কারণে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা এমনিতেই কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকায় ছিলেন।
পেন্টাগনের গোপন নথি প্রকাশ্যে আনায় গুপ্তচরবৃত্তি ও হ্যাকিংয়ের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে চলতি বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের পক্ষে রায় দেয়।
২০১৯ সালে একুয়েডর সরকার শরণার্থী মর্যাদা তুলে নিলে ব্রিটিশ পুলিশ লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে, এর পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের হাই সিকিউরিটি বেলমার্শ কারাগারে বন্দি দিন কাটাচ্ছেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের বেশ অবনতিও হয়েছে।
কারাগারে থাকার ফলে তার ওজন অনেকখানি কমে যায় এবং তিনি গুছিয়ে কথা বলার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, যে কারণে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে পরে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
গত বছরের ডিসেম্বরে স্ট্রোক হওয়ার পর তার স্নায়বিক ক্ষতি, চোখের পাতা ঝুলে পড়া ও স্মৃতিশক্তিজনিত সমস্যা দেখা দেয় বলে তার স্ত্রী জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ নিয়ে যা চলছিল, তার চাপেই অ্যাসাঞ্জের স্ট্রোক হয় বলেও সেসময় বলেছিলেন স্টেলা।
যুক্তরাজ্য পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগের ৭ বছরও উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতাকে লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে গৃহবন্দি অবস্থাতেই থাকতে হয়েছে।
সুইডেনে তার বিরুদ্ধে হওয়া ধর্ষণ মামলার কারণে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটিতে প্রত্যর্পণ আটকাতে একুয়েডরের ওই দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। তার আশঙ্কা ছিল, সুইডেনের মামলা একটি ফাঁদ। সুইডেন বিচারের জন্য নিয়ে গিয়ে তাকে পরে যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তুলে দেবে।
পরে সুইডেনের ওই ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি মেলে তার।
অ্যাসাঞ্জের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হলে তার ‘আত্মহত্যা করার’ ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের এক আদালত প্রথমে তার প্রত্যর্পণ আটকে দিয়েছিল। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করে জয় পায় যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোতে দোষী সাব্যস্ত হলে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতার ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
তার সমর্থকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নথি ফাঁস করে অ্যাসাঞ্জ আদতে সাংবাদিকতার চর্চাই করেছেন।
নিজেদের যুদ্ধাপরাধ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটন এখন উইকিলিকস ও এর প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেকের।