পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘চিরন্তন সম্প্রীতিতে বিশ্বাসই ছিল গর্বাচেভের বড় ভুল’

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একথা বলেছে রাশিয়ার পেসিডেন্টের দাপ্তরিক বাসভবন ক্রেমলিন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2022, 04:22 PM
Updated : 31 August 2022, 04:22 PM

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে তাকে বিশ্বে ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এক অসাধারণ রাষ্ট্রনায়ক বলে প্রশংসা করেছে ক্রেমলিন। তবে ‘রক্তপিপাসু’ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্প্রীতির সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ধারণা অত্যন্ত ভুল ছিল বলেও ক্রেমলিন মন্তব্য করেছে।

এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের আক্ষেপই সামনে এসেছে। বিংশ শতাব্দীর সেই বিশাল ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে মর্মপীড়ায় ভুগেছেন পুতিন, যা কেবল একটা সুযোগ পেলে তিনি আবার পাল্টে দিতেন।

সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর চারমাসের মাথায় পুতিন এ অভিযানের সঙ্গে রুশ সাম্রাজ্যের জার ‘পিটার দ্য গ্রেট’ এর অভিযানের তুলনাও টেনেছিলেন। বলেছিলেন, তিনিও পিটারের মতোই দেশের ভূখন্ড পুনরুদ্ধারের কাজে নেমেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাপ্তি পুতিনের কথায়, “ঐতিহাসিক রাশিয়ারই ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া।”

১৯৯১ সালে পতন হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের। তার ছয়বছর আগে ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন গর্বাচেভ। ৯১ বছর বয়সে মঙ্গলবার রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

কোনও ধরনের রক্তপাত ছাড়াই বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানে তিনি যেমন কৃতিত্বের দাবিদার এবং পশ্চিমাদের আনেকের কাছেই প্রিয়পাত্র ছিলেন, তেমনি রাশিয়ায় তিনি সমাজতন্ত্রের পতনের জন্যও দায়ী ছিলেন।

তার মৃ্ত্যুর খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, “গর্বাচেভ ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন একথা সত্য। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন যে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তাই তিনি জরুরী সমস্যাগুলোর নিজস্ব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দেশের নেতৃত্বের হাল ধরেছিলেন নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত এক কঠিন সময়ে।”

গর্বাচেভ সংস্কার প্রবর্তন করেছিলেন বটে। কিন্তু ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসতে থাকা পতন থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাঁচাতে পারেননি। আর এই পতনের পায়ে পায়ে রাশিয়ায় বছরের পর বছর যে বিশৃঙ্খলা, মর্যাদাহানি, অর্থনৈতিক দুর্ভোগের ধকল গেছে তার জন্য বহু রুশ নাগরিক তাকেই দোষ দিয়েছে।

যদিও রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের বিরোধীমত এবং বাকস্বাধীনতা নির্মমভাবে দমন করা নিয়ে যারা সরব হয়েছেন তাদের দৃষ্টিতে গর্বাচেভ একজন গণতন্ত্রবাদী হিসাবেই বিবেচিত, যিনি সঠিক কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু গর্বাচেভকে নিয়ে বেশ কাঠখোট্টা দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তার মতে, পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘চিরন্তন সম্প্রীতি’র সম্পর্কে বিশ্বাস করে গর্বাচেভ ভুল করেছিলেন।

পেসকভ বলেন, “তিনি (গর্বাচেভ) আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন যে, স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবে। আর তা গোটা বিশ্ব, পশ্চিমা দেশগুলো এবং নতুন এক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চিরন্তন সম্প্রীতির এক অধ্যায় বয়ে আনবে। কিন্তু তার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।”

“এইরকম সখ্য-সম্প্রীতির কোনও অধ্যায় আসেনি। আর আমাদের বিরোধীপক্ষের রক্তপিপাসু স্বভাবটাই বেরিয়ে এসেছে। আমরা যে তা সময়মত উপলব্ধি করতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি সেটিই মঙ্গল।”

মিখাইল গর্বাচেভের মৃত্যুতে পশ্চিমের রাজনৈতিক নেতারা দলে দলে শোক প্রকাশ করছেন এবং তার ভুমিকারও ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।

ওদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বুধবার এক টেলিগ্রাম বার্তায় গর্বাচেভের স্বজনদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। যদিও গর্বাচেভের জীবদ্দশায় তার সঙ্গে পুতিনের সম্পর্কে ছিল টানাপোড়েন।

বিবিসি জানায়, ২০০৬ সালে দুই নেতা সর্বশেষ বৈঠক করেছিলেন। আর অতিসম্প্রতি পুতিনের ইউক্রেইনে আগ্রাসন শুরুর সিদ্ধান্তে নাখোশ ছিলন গর্বাচেভ। যদিও ২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখলের রুশ পদক্ষেপ সমর্থন করেছিলেন তিনি।