তাইওয়ানে ১১০ কোটি ডলারের অস্ত্র বেচছে যুক্তরাষ্ট্র, ক্ষুব্ধ চীন

স্বশাসিত দ্বীপটির চারপাশে চীনের আগ্রাসী সামরিক মহড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পেন্টাগন তাইপের জন্য অস্ত্রের নতুন এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Sept 2022, 07:27 AM
Updated : 3 Sept 2022, 07:27 AM

জাহাজবিধ্বংসী ৬০টি এবং আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্রসহ তাইওয়ানের কাছে ১১০ কোটি ডলারের সম্ভাব্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে সায় দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

তাইওয়ানে গত মাসে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর স্বশাসিত দ্বীপটির চারপাশে চীনের আগ্রাসী সামরিক মহড়ার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার পেন্টাগন তাইপের জন্য অস্ত্রের নতুন এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ।

পেলোসিই কয়েক দশকের মধ্যে তাইওয়ান সফরে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদধারী রাজনীতিক।

পেন্টাগনের প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, তাইওয়ানে বিক্রি হতে যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সাইড উইন্ডার ক্ষেপণাস্ত্র যা আকাশ থেকে আকাশে ও ভূমিতে আক্রমণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এর খরচ ধরা হয়েছে ৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের মতো।

এর পাশাপাশি হারপুন জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য আনুমানিক ৩৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং তাইওয়ানের নজরদারি রাডার প্রোগ্রামের সহায়তায় আনুমানিক ৬৬ কোটি ৫৪ ডলার খরচ পড়বে।

সম্ভাব্য এই অস্ত্র বিক্রি চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে স্থিতিশীলতার মারাত্মক ক্ষতি করবে বলে সতর্ক করেছেন ওয়াশিংটনের চীন দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গিউ।

“এমন পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় চীন আইনি ও যথাযথ পাল্টা ব্যবস্থা নেবে,” বলেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বলছে, তাইওয়ানের জন্য অস্ত্রের যে প্যাকেজ, তা অনেকদিন ধরেই বিবেচনায় ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই প্যাকেজ ঠিক হয়েছে।

“তাইওয়ানের চারপাশে বিমান ও সমুদ্রে উপস্থিতির মাধ্যমে উত্তেজনা বৃদ্ধিসহ চীন তাইপের ওপর চাপ বাড়ানো অব্যাহত রাখায় এবং তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতাবস্থা পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হওয়ায় আমরা তাইওয়ানের আত্মরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখার জন্য যা দরকার, তা দিচ্ছি,” বিবৃতিতে এমনটাই বলেছেন হোয়াইট হাউসের চীন ও তাইওয়ান বিষয়ক ঊর্ধ্বতন পরিচালক লরা রোজেনবার্গার।

গত মাসে রয়টার্স জানিয়েছিল, বাইডেন প্রশাসন তাইওয়ানকে নতুন উপকরণ দেওয়ার কথা ভাবলেও সেগুলো স্বশাসিত দ্বীপটির বর্তমান সামরিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং আগের ক্রয়াদেশই পূরণ করবে, নতুন সক্ষমতা তৈরি করবে না।

পেন্টাগন বলেছে, শুক্রবার তাইওয়ানের জন্য যে উপকরণ ও সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা ওই অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনবে না।

এর মাধ্যমে তাইওয়ান বিষয়ক নীতিতেও কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না, বলছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

“সম্ভাব্য এই অস্ত্র বিক্রি সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকীকরণে তাইওয়ানের ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় সহায়তা এবং তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখার নিয়মিত প্রক্রিয়া,” বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুখপাত্র।

অস্ত্র বিক্রিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে ধন্যবাদ প্রকাশ করে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাইওয়ানের ওপর যে গুরুতর হুমকি বিদ্যমান তা চীনের সাম্প্রতিক উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রি করা অস্ত্র চীনের এই সামরিক চাপ মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সায় মিললেও তাইওয়ানে অস্ত্র বিক্রির আগে তা কংগ্রেসে পর্যালোচিত হবে।

তবে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সদস্যরাই বলেছেন, এই অস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে কোনো বাধা আসবে বলে মনে করছেন না তারা।

পেলোসির সফরের পর তাইওয়ানে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের আরও দুটি সফর হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নররাও স্বশাসিত দ্বীপটিতে গিয়েছেন।

এই সব সফরেরই তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং।