কঠোর নিরাপত্তায় আবেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাপান

টানা সবচেয়ে বেশিদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকা আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় থাকছেন অতীত-বর্তমান প্রায় অর্ধশত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 04:40 AM
Updated : 27 Sept 2022, 04:40 AM

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে, অতীত-বর্তমান প্রায় অর্ধশত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাপান।

মঙ্গলবার তার রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ সাতশর বেশি বিদেশি অতিথি পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে পৌঁছেছেন বা পথে রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং, অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্থনি আলবানিজ, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগুয়েন ফুক, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সো, ফিলিপিন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে-কার্পিও, ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মা’রুফ আমিন এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলেরও এ অনুষ্ঠানে থাকার কথা।

বিদেশি অতিথিদের অনেকের সঙ্গেই সোম ও মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। সেসব বৈঠকের ছবিও টুইটারে দিচ্ছে তার কার্যালয়।

কিশিদার কেবল মঙ্গলবারই ৪০টিরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

টোকিওর কেন্দ্রস্থলে খেলাধুলা ও কনসার্টের জন্য খুবই পরিচিত নিপ্পন বুদোকানে হতে যাওয়া তার শেষকৃত্যে সবমিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ অতিথি থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে, তবে বাইরে কিছু নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে সকাল ১০টা থেকেই জনসাধারণ ফুল ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে আবের প্রতি শ্রদ্ধায় শামিল হতে পারবে।

অবশ্য নির্ধারিত সময়ের আগে থেকেই সেসব স্ট্যান্ডে জনসাধারণ শ্রদ্ধা জানানো শুরু করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

Also Read: শিনজো আবে: জাপানের শির আরও উঁচুতে তোলা ছিল যার লক্ষ্য

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় প্রায় এক হাজার সেনা দায়িত্ব পালন করবে; সামরিক বাহিনীর অনার গার্ড আবেকে স্যালুট জানাতে কামান থেকে ছুড়বে ১৯টি ফাঁকা গোলা।

রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নির্বিঘ্নে করতে বুদোকানের আশপাশের সব সড়ক মঙ্গলবার ভোরের আগে থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; সকালে ওই এলাকায় ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে, বাহিনীটির অনেক সদস্যকে জাপানের অন্যান্য অংশ থেকেও আনা হয়েছে।

নিপ্পন বুদোকান সংলগ্ন বিভিন্ন স্কুল বন্ধ করে দেওয়ায় অভিভাবকদের অনেকে ক্ষোভ জানিয়েছেন; কাছাকাছি অনেক অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, তাদেরকে মঙ্গলবার এ সপ্তাহের ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

কঠোর এ নিরাপত্তার আরেকটি কারণ হতে পারে, আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিয়ে জাপানজুড়ে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ।

অনেকেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে কেন রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দিতে হবে সেই প্রশ্ন তুলছেন, জাপানে সাধারণত রাজপরিবারের সদস্যদেরই রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়।

অনেকে এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিপুল ব্যয় নিয়েও ক্ষুব্ধ। তাদের ভাষ্য, আবেকে শ্রদ্ধা জানাতে বিরাট অংকের খরচ না করে সেই অর্থ টাইফুন শিজুয়োকাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পেছনে ব্যয় করা উচিত ছিল।

বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবারও দেশজুড়ে নানান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহরে দলের এক নির্বাচনী প্রচারসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় জুলাইয়ের ৮ তারিখ বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন আবে।

হাতে বানানো বন্দুক দিয়ে খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করা হয়। বন্দুকধারী পরে জানান, বিতর্কিত একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আবের মাখামাখি এবং তাদের প্রচার-প্রসারে তার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েই সাবেক জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

জাপানে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বন্দুক হামলার ঘটনা বিরল হওয়ায় এ ঘটনা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রায়ই সামান্য নিরাপত্তা নিয়েই জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে দেখা যেত, আবে হত্যাকাণ্ড সেই সংস্কৃতি বদলে দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির কথা স্বীকার করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।