জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
Published : 08 Nov 2022, 01:09 PM
মিশরের শারম-আল-শেখ এ জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭ এর উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকরা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইকে মানুষের বেঁচে থাকার যুদ্ধ বলে তুলে ধরেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইয়ে আমরা হেরে যাচ্ছি বলে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্ব দ্রুতগতিতে নরকের মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সোমবার মিশরের সাগরতীরবর্তী ওই অবকাশ কেন্দ্রে বিশ্বের সরকারগুলো দুই সপ্তাহের জলবায়ু আলোচনা শুরু করার পর এই কঠোর বার্তাটিই তাদের বক্তব্যের সুর নির্ধারিত করে দেয়; আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র নেতারা এই বার্তারই প্রতিধ্বনি করেন।
সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে গুতেরেস বলেন, “সহযোগিতা অথবা ধ্বংস: মানবতাকে এর মধ্যে একটি বেছে নিতে হবে।”
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসা তরান্বিত করতে ও ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে দ্রুত অর্থায়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কয়েক দশক ধরে আলোচনা চললেও রাষ্ট্রগুলো এ পর্যন্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি করার তারা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাও অত্যধিক উষ্ণ হয়ে যাওয়া থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর মতো পর্যাপ্ত নয়।
গুতেরেস বলেন, ইউরোপের স্থল যুদ্ধ, শীর্ষ দুই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণকারী যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অবনতিশীল কূটনৈতিক সম্পর্ক, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সরবরাহ সীমিত হয়ে পড়া দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে আরও দূরে সরিয়ে নেওয়ার ও ক্লিন এনার্জিতে স্থানান্তরের লাইন থেকে বিচ্যুত করার হুমকি তৈরি করছে।
“গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ বেড়ে চলেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে আর আমাদের গ্রহ দ্রুত এমন একটি মাত্রার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যা জলবায়ু বিশৃঙ্খলাকে অপরিবর্তনীয় করে তুলবে,” বলেছেন তিনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, একসঙ্গে অনেকগুলো বৈশ্বিক সংকটে বিশ্ব বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেও রাষ্ট্রগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি ত্যাগ না করা গুরুত্বপূর্ণ।
“জ্বালানির পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার হুমকির কারণে জলবায়ু বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি আমরা ত্যাগ করবো না, তাই সব দেশকেই তাদের সব প্রতিশ্রুতি বজার রাখতে হবে,” বলেছেন তিনি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, যুদ্ধের কারণেই বিশ্বকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ছাড়িয়ে আনার উদ্যোগ তরান্বিত করা দরকার।
“বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা জ্বালানির মূল্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ধীরে যাওয়ার কোনো কারণ নয় বরং আরও দ্রুত কাজ করার কারণ,” বলেছেন সুনাক।
বিশ্ব নেতারা বৈশ্বিক উষ্ণতার ঝুঁকির বিষয়ে সহমত পোষণ করলেও ‘জলবায়ু বন্ধুভাবাপন্ন’ ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা এবং ইতোমধ্যে হওয়া জলবায়ুজনিত ক্ষতির জন্য কার অর্থ দেওয়া উচিত ইত্যাদি নিয়ে তাদের বক্তব্যে বড় ধরনের দূরত্ব প্রকাশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জীবাশ্ম জ্বালানির যুগ শেষ করার আহ্বান জানিয়ে গুতেরেসের দেওয়া বক্তব্যের পরপরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান মঞ্চে উঠে জানান, বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানির চাহিদা যতদিন থাকবে ততদিন তার দেশ সেগুলো উত্তোলন ও সরবরাহ করে যাবে। দায়িত্বশীল সরবরাহকারী হিসেবেই তারা এমনটি করবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: