নাজিব রাজাক: বিলাসী জীবনযাপন থেকে কারাগারের বদ্ধ প্রকোষ্ঠে

বারাক ওবামা, ডনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিশ্বনেতাদের সঙ্গে গলফ খেলা, মালয়েশিয়ার অভিজাত এক পরিবারের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা সন্তান নাজিবকে এখন দিন কাটাতে হবে কাজাংয়ের কারাগারে, খুনি ও মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2022, 11:54 AM
Updated : 24 August 2022, 11:54 AM

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এখন যে কারাগারে, সেখান থেকে তার কুয়ালা লামপুরের ধন্যাঢ্য বুকিত টুংকু এলাকার প্রাসাদোপম বাড়ির দূরত্ব এক ঘণ্টার কম হলেও জীবনযাপনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান।

দুর্নীতির দায়ে ১২ বছরের কারাদণ্ডের সাজার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সর্বশেষ আপিলে হারার পর কড়া নিরাপত্তায় নাজিবকে কাজাংয়ে দেশটির সর্ববৃহৎ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাজধানী কুয়ালা লামপুরের দক্ষিণপূর্বের বিশালাকার এই কমপ্লেক্সে সর্বোচ্চ ৫ হাজার বন্দি থাকতে পারবে; নারী বন্দিদের জন্য সেখানে আলাদা স্থাপনাও আছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রথম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে নাজিব জামিনেই ছিলেন।

মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় তহবিল ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদের (ওয়ানএমডিবি) একটি সাবেক ইউনিট থেকে এক কোটি ডলারের মতো অর্থ নিজের ব্যাংক হিসাবে নেওয়ায় বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থপাচারের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া কারাদণ্ড ও জরিমানার সাজা বহাল রাখলে তার কারাগারে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে পড়ে।

মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে নাজিব ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন; ওয়ানএমডিবি তহবিলের কয়েকশ কোটি ডলার আত্মসাৎ কেলেঙ্কারি নিয়ে জনঅসন্তোষে ২০১৮ সালেই নির্বাচনে হেরে যান তিনি।

তার আমলে দায়িত্ব পালন করা দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে নিয়মিত গলফ খেলা, মালয়েশিয়ার অভিজাত এক পরিবারের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা সেই সন্তানকে এখন দিন কাটাতে হবে কাজাংয়ের কারাগারে, খুনি ও মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে।

জেলখানায় নাজিবকে কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতে পারে এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে কারা বিভাগকে ইমেইল করা হলেও তারা তাতে সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

জেলে নাজিব টেলিভিশন, এসিসহ ‘ভিআইপি বন্দির’ সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন, এক ব্যবহারকারীর এমন পোস্টকে ‘ফেইক নিউজ’ বলে উড়িয়েও দিয়েছে তারা।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বলছে, মালয়েশিয়ার কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকে; স্বাস্থ্যসেবা সীমিত এবং চিকিৎসা সুবিধা অপর্যাপ্ত হওয়ায় সেখানে যক্ষা ও চর্মরোগের মতো সংক্রামক রোগও নিত্যনৈমিত্তিক।

৮ বছর মালয়েশিয়ার অন্য এক জেলে কারারুদ্ধ থাকা বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ‘সব সময় পচা মাছ’ দেওয়াসহ কারাগারে তাকে অমানবিক ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।

তবে নাজিবের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি ২০১৬ সালে পার্লামেন্টকে বলেছিলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী আনোয়ারকে কাস্টমাইজড হাসপাতাল শয্য, ডেস্ক, গরম পানিতে গোসল এবং বিশেষ খাবারসহ নানান সুযোগসুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

আনোয়ার কারাগারের লাইব্রেরিতে যেতে, প্রতিনিয়ত তাকে দেখতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা কিংবা বিচারে অংশ নিতে আদালতে যাওয়ার সুযোগ পেতেন বলেও সেসময় বলেছিলেন আহমাদ জাহিদ।

দুর্নীতি এবং সমকামিতার অভিযোগে দুই দফায় কারাগারে যেতে হয়েছিল আনোয়ারকে। তিনি অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিহিত করে আসছেন।

২০১৮ সালে নাজিব নির্বাচনে হারার কয়েকদিন পরই রাজার ক্ষমায় আনোয়ার মুক্তি পান।

নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটলে নাজিব এখন কেবল ওয়ানএমডিবি এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থার দুর্নীতি সংক্রান্ত চারটি মামলার শুনানি উপলক্ষেই কাজাং ছাড়তে পারবেন বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ওয়ানএমডিবি থেকে সাড়ে চারশ কোটি ডলারের বেশি গায়েব হয়ে গেছে।

এর মধ্যে একশ কোটি ডলারের বেশি অর্থের সন্ধান নাজিবের ব্যাংক হিসাবে পাওয়া গেছে বলে মালয়েশিয়ার তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করলেও সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।

নাজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের বাসভবন থেকে প্রায় ২৭ কোটি ৫০ লাখ মূল্যের নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য দামি দামি জিনিসপত্র মেলার পর তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিষয়টি সামনে আসে।

নাজিবের স্ত্রীর রোসমাহ মনসুরের বিরুদ্ধে হওয়া একটি দুর্নীতি মামলার রায়ও আগামী ১ সেপ্টেম্বর হওয়ার কথা। এই দুর্নীতি মামলাটি ওয়ানএমডিবি কেলেঙ্কারি সংশ্লিষ্ট নয়, স্বামীর মতো নাজিবপত্নীও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।