টুইটারে ভিন্নমতাবলম্বীদের অনুসরণ, সৌদি নারীর কারাদণ্ড

সালমা আল-শিহাব নামের এই নারী ইংল্যান্ডের লিড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছুটি কাটাতে সৌদি আরব গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তার ৩৪ বছরের জেল হয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2022, 03:50 PM
Updated : 17 August 2022, 03:50 PM

তার একটি টুইটার একাউন্ট আছে। সেখান থেকে তিনি ভিন্নমতাবলম্বী ও মানবাধিকার কর্মীদের অনুসরণ করেন এবং তাদের নানা টুইট নিজের টুইটার একাউন্ট থেকে শেয়ার করেন। কেবলমাত্র এসব কারণে এক নারীকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে সৌদি আরব।

সালমা আল-শিহাব নামে ৩৪ বছরের ওই নারী ইংল্যান্ডের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছুটি কাটাতে সৌদি আরব গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার হতে হয় এবং তিনি এই সাজার মুখে পড়েন বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী আদালত এ রায় দিল।

দুই সন্তানের মা সালমাকে প্রথমে ‘জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং বেসামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নকারী’ ওয়েবসাইটে প্রবেশের অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে একজন সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে সালমার অন্য অপরাধগুলোও বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ জানান।

গত সোমবার আপিল আদালত সালমাকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৪ বছরের জন্য তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

আদালতের নথির বরাত দিয়ে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়, সালমার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি “জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং বেসামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে পারে এমন মানুষদের টুইটার একাউন্ট অনুসরণ এবং টুইট শেয়ার করে তাদের সহযোগিতা করছেন।”

এ রায়ের বিরুদ্ধে সালমা আপিল করতে পারবেন বলে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে।

সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে সেদেশে বা যুক্তরাষ্ট্রে যেসব মানবাধিকার কর্মীরা কাজ করছেন তাদের সবার তুলনায় সালমার কার্যক্রম বলতে গেলে কিছুই না। তিনি কোথাও নেতৃত্বের পর্যায়ে নেই বা তিনি তেমন কোনো সক্রিয় আন্দোলনেও জড়িত নন। তাকে সৌদি সরকারের সমালোচনা করতেও দেখা যায়নি।

নিজের ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে তিনি নিজের বর্ণনায় লিখেছেন, একজন ডেন্টাল হাইজেনিস্ট, মেডিকেলের শিক্ষার্থী, লিড ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী, প্রিন্সেস নুরাহ বিনতে আব্দুল রহমান ইউনিভার্সিটির লেকচারার, একজন স্ত্রী এবং তার দুই ছেলে নোয়াহ ও আদমের মা। ইন্সটাগ্রামে তার মাত্র ১৫৯ জন ফলোয়ার আছেন।

টুইটারে তার দুই হাজার ৫৯৭ জন ফলোয়ার আছেন। সেখানে মূলত সালমা কোভিড মহামারীর সময়টা কীভাবে কাটিয়েছেন তা নিয়ে পোস্ট এবং তার দুই শিশুপুত্রের ছবিই বেশি দেখা যায়।

মাঝেমধ্যে তিনি সৌদি আরবের ভিন্নমতাবলম্বী যারা নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তাদের টুইট রিটুইট করেছেন। আর মাঝেমধ্যে সৌদি আরবে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

লিডস ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে ২০১৮ বা ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে যান সালমা।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছুটি কাটাতে তিনি সৌদি আরবে নিজ বাড়িতে ফেরেন। তার দেশে যাওয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল স্বামী ও দুই সন্তানকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু সেখানে সৌদি আরবের তদন্ত কর্মকর্তারা প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠান এবং এক পর্যায়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন।

সালমার মামলা অনুসরণ করছেন এমন একজন গার্ডিয়ানকে বলেন, সালমাকে মাঝে মাঝে নির্জন কারাগারে রাখা হত। বিচার চলাকালে তার সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বিচারককে কিছু একটা ব্যক্তিগতভাবে বলতে চেয়েছেন।

তিনি বলেছেন, সেসব কথা তিনি তার বাবার সামনে বলতে পারবেন না। কিন্তু বিচারক তাকে সে অনুমতি দেননি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে বাইডেন সৌদি আরবে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সরব ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশুগজি হত্যার ঘটনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অথচ সৌদি আরব সফরে গিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বাইডেন ‘ফিস্ট বাম্প’ করেন। যে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছবিটি মানবাধিকারের পক্ষের লোকজনের জন্য ছিল মারাত্মক এক ধাক্কা। তারা বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন।