প্রলয়ঙ্করী বন্যা: পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে, মৃত্যু ছাড়াল ১১০০

দেশটির এবারের এ দুর্যোগকে ‘নজিরবিহীন জলবায়ু বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করে তাদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 August 2022, 04:10 AM
Updated : 31 August 2022, 04:10 AM

মুষলধারে বৃষ্টি ও বন্যায় এক তৃতীয়াংশ নিমজ্জিত পাকিস্তানে প্রাণহানি এক হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে; মৃতদের মধ্যে ৩৮০টি শিশুও আছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির এবারের এ দুর্যোগকে ‘নজিরবিহীন জলবায়ু বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করে তাদের পাশে দাঁড়াতে মঙ্গলবার জাতিসংঘ বিশ্বের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে।

তুমুল বর্ষণের কারণে সৃষ্ট ঐতিহাসিক এ প্লাবন অসংখ্য বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি করেছে, বিপদে ফেলেছে সোয়া তিন কোটি মানুষকে; যা দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।

দুর্গম এলাকাগুলোতে আটকে পড়াদের উদ্ধারে এবং খাবারের প্যাকেট ফেলতে দেশটির সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারগুলোকে এখন ছুটে বেড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

৫ কোটি জনসংখ্যার সিন্ধু প্রদেশ এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন দশকের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এবার সেখানে ৪৬৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

“কার্যত দেশের এক তৃতীয়াংশই এখন পানির নিচে,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শেরি রহমান।

বিপর্যয়ের মাত্রাকে ‘নজিরবিহীন’ বলার পাশাপাশি পানি শিগগিরই নামছে না বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

ইসলমাবাদে নিজের কার্যালয়ে দেওয়া এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, বন্যায় মৃতদের মধ্যে অন্তত ৩৮০টি শিশুও আছে।

এ ‘নজিরবিহীন জলবায়ু বিপর্যয়ের’ প্রভাব দেখতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বৈশ্বিক এ সংস্থার এক মুখপাত্র।

পাকিস্তানে জলবায়ু বিপর্যয়ের এ মাত্রা সারা বিশ্বের সম্মিলিত মনোযোগ চাইছে, বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে আটকে পড়া কিছু পর্যটকসহ প্রায় ৩০০ জনকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পাকিস্তানের রাষ্ট্র পরিচালিত এক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

উত্তরপশ্চিমের ‍দুটি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা হয়েছে ৫০ হাজারে বেশি মানুষের।

“এখানে জীবন অনেক কষ্টের,” বলছিলেন ৬৩ বছর বয়সী গ্রামবাসী হুসেইন সাদিক। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের একটিতে তিনি ছাড়াও তার বাবা-মা এবং ৫ সন্তানও আশ্রয় নিয়েছেন। বলেছেন, বন্যা তাদের ‘সব কেড়ে নিয়েছে’।

আশ্রয়কেন্দ্রের চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার কথা জানিয়েছে হুসেইন। বলেছেন, ডায়রিয়া আর জ্বর এখানে নিত্যনৈমিত্তিক।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া উত্তরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সোয়াত উপত্যকা পরিদর্শন করেছেন।

“ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দীর্ঘ, দীর্ঘ সময় লাগবে,” বলেছেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএইডের সহায়তায় পাকিস্তানকে ৩ কোটি ডলার দেবে বলে এক বিবৃতিতে বলেছে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস।

“পাকিস্তানজুড়ে জীবন, জীবিকা ও ঘরবাড়ির এমন ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতিতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত,” বিবৃতিতে বলেছে তারা।