ইউক্রেইনের গ্রিডে হামলা, রাশিয়া এগুচ্ছে উত্তরাঞ্চলেও

কিইভের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেখাতে ২০-২২ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড সফর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2023, 11:22 AM
Updated : 11 Feb 2023, 11:22 AM

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশ সফর শেষে ইউক্রেইনে ফেরার পর দেশটির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছে রাশিয়া।

শুক্রবার তাদের এ হামলায় ইউক্রেইনজুড়ে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় মস্কোর দীর্ঘ-প্রতীক্ষিত আক্রমণও শুরু হওয়ার পথে বলে ইউক্রেইনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউক্রেইনের সশস্ত্র বাহিনী বলেছে, রুশ সেনারা ইউক্রেইনজুড়ে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ১২টি বিমান ও ২০টি গোলা হামলা হয়েছে। 

মস্কোর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ৬১টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে বলেও ফেইসবুক পোস্টে দাবি করেছে তারা। 

দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী হারমান হালুশ্চেঙ্কো বলেছেন, ছয়টি অঞ্চলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যে কারণে ইউক্রেইনের অধিকাংশ এলাকা অন্ধকারে ডুবে আছে।

এদিকে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের বর্ষপূর্তির আগ দিয়ে ২০-২২ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ড সফর করে কিইভের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্র যে ইউক্রেইনকে আরও নিরাপত্তা সহায়তা ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাবে তাও স্পষ্ট করবেন তিনি।

আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মীরাও ওয়ারশতে ইউক্রেইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবেন বলে বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত এক কর্মকর্তা শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে কিইভ আইএমএফের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি ডলার ধার পেতে চাপ দেবে।

রাশিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগেই জেলেনস্কি ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ সফর শেষে দেশে ফিরেছেন; এবারের সফরে মিত্ররা তাকে উৎসাহের সঙ্গে বরণ করে নিলেও যুদ্ধবিমান দেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

রাশিয়াকে সাধারণত যুদ্ধ বা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ইউক্রেইনের যে কোনো অগ্রগতির পাল্টায় প্রতিবেশী দেশটিতে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র মারতে দেখা যায়।

ইউক্রেইন অনেকদিন ধরে রাশিয়ার বড়সড় আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর বর্ষপূর্তি পালনের আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের সফলতা দেখাতে চাইবেন, এই ধারণা থেকেই ওই আক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেই আক্রমণের প্রাথমিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করছেন দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের ইউক্রেইনীয় গভর্নররা।

পুতিন এবার পার্লামেন্টে তার বাৎসরিক ভাষণও দেরি করে দিতে যাচ্ছেন। এবার তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি এ ভাষণ দেবেন। গত বছর এ দিনে তিনি রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চাহিদাকে সমর্থন দিয়ে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বাধীনতায় স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতেই তিনদিন পর তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুর হয়।

রাশিয়ার এই অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। গত বছরের শেষভাগে রুশসমর্থিত কর্মকর্তাদের অধীনে হওয়া এক গণভোটে অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ বাসিন্দাই রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ পোষণ করলে পুতিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ডভুক্ত করে নিয়েছিলেন।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রুশ সেনারা বাখমুত ও ভুহলেদারে বেশ খানিকটা এগিয়েছে।

তবে ভুহলেদারে সামান্য অগ্রগতির জন্যও রাশিয়াকে চড়ামূল্য দিতে হয়েছে বলে ইউক্রেইনের সেনাদের পাশাপাশি রুশপন্থি অনেক সামরিক ব্লগারও জানিয়েছেন।

যুদ্ধক্ষেত্র সংক্রান্ত কোনো দাবিই রয়টার্স যাচাই করে দেখতে পারেনি।

সামনের মাসগুলোতে রুশ বাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ শানানোরও পরিকল্পনা আছে কিইভবাহিনীর, তবে পশ্চিমাদের প্রতিশ্রুত অত্যাধুনিক ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান ছাড়া সেগুলো শুরু হবে না বলেই অনুমান করা হচ্ছে।