মাত্র ২২ সপ্তাহে জন্ম নেওয়া কানাডার যজম শিশু আদিয়াহ এবং আদ্রিয়াল নাদারাজা সবচেয়ে ‘অপরিণত যমজ’ হিসেবে গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছে।
বিবিসি জানায়, নির্ধারিত সময়ের ১২৬ দিন আগেই তাদের জন্ম হয়। এর আগের রেকর্ডটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের এক জোড়া যমজ শিশুর দখলে। তারা নির্ধারিত সময়ের ১২৫ দিন আগে জন্ম নিয়েছিল।
গিনেস কর্তৃপক্ষ জানায়, যদি ওই দুই শিশু ২২ সপ্তাহ পূরণ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেও জন্ম নিত, তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জীবন রক্ষায় ব্যবস্থা নিত না।
সাধারণত ৪০ সপ্তাহকে পূর্ণ গর্ভাবস্থা ধরা হয়। অর্থাৎ, কানাডার ওই শিশুদুটি ১৮ সপ্তাহ আগেই জন্ম গ্রহণ করেছে।
তাদের মা শাকিনা রাজেন্দ্রম বলেন, ২১ সপ্তাহ ৫ দিনের দিন যখন তার প্রসব বেদনা শুরু হয় তখন চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ‘শিশুদুটি বাঁচবে না, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শূন্য শতাংশ’।
তার মাত্র কয়েক মাস আগে ওন্টারিওর একই হাসপাতালে শাকিনা তার প্রথম সন্তানকে হারান। ওই শিশুটিও সময়ের আগেই জন্ম নিয়েছিল।
শিশুদের বাবা কেভিন নাদারাজাহ বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছিলেন, তারা এত অল্প সময় মায়ের পেটে থাকা শিশু দুটিকে বাঁচাতে কোনও সাহায্য করতে পারবে না।
‘‘পুরো রাত আমি কাঁদতে কাঁদতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।”
অস্ট্রেলিয়ায় বেশিরভাগ হাসপাতাল ২৪ থেকে ২৬ সপ্তাহের আগেই জন্ম নেওয়া শিশুদের জীবন রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।
কিন্তু শাকিনা-কেভিন দম্পতি এক্ষেত্রে ভাগ্যবান ছিলেন। কারণ, টরেন্টোর মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের নিউনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে তখন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।
২১ সপ্তাহ ৫ দিনে শাকিনার প্রসব বেদনা ওঠে এবং তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দ্বিতীয় দিন তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি ২২ সপ্তাহ পূরণ হওয়ার কয়েক মিনিট আগেও শিশু দুটির জন্ম হয় তবে তাদের বাঁচাতে হাসপাতাল থেকে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
শাকিনা বলেন, ‘‘তখন আমার ২১ সপ্তাহ ৬ দিন। আমার রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমি প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম আরো কয়েকঘণ্টা আমার সন্তানদের পেটের ভেতর ধরে রাখতে।”
ওইদিন মধ্যরাতের পর শাকিনার ‘ওয়াটার ব্যাগ’ ফেটে যায় এবং ২২ সপ্তাহে প্রবেশের দুই ঘণ্টারও কম সময়ে শিশু দুটির জন্ম হয়।
এত আগে জন্ম নেওয়ায় শিশু দুটির বেশ কিছু গুরুতর শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তারপরও তারা বেঁচে আছে এবং তাদের বয়স এক বছর হতে চলেছে।
তাদের মা বলেন, ‘‘অনেকবারই আমরা চোখের সামনে আমার সন্তানদের প্রায় মরে যেতে দেখেছি।”
শিশু দুটিকে চিকিৎসকরা এখনও গভীর নজরদারিতে রেখেছেন। তারা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।