কয়েকমাসের লড়াইয়ের পর ইউক্রেইনের লবণখনির শহর সোলেদারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। ইউক্রেইন অভিযানে একে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ধাপ বলে বর্ণনা করেছে দেশটি।
এই জয়ের ফলে রুশ সেনারা কাছের বড় নগরী বাখমুতে ইউক্রেইনের পণ্য সরবরাহ রুট বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারবে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়।
সোলেদার রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসা নিয়ে এটিই মস্কোর প্রথম সরকারি ঘোষণা। এ ঘোষণায় রুশ ভাড়াটে সেনাদল ওয়াগনারের কথা উল্লেখ করা হয়নি। সোলেদার দখলের লড়াইয়ে এ দলটিই অগ্রভাগে ছিল।
ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন গত মঙ্গলবার রাতেই দাবি করেছিলেন, তাদের সেনারা সোলেদারের দখল নিয়েছে। তবে ইউক্রেইন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, শহরটিতে তুমুল লড়াই চলছে।
ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা অবশ্য এখনও বলছেন, সোলেদারে লড়াই চলছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘অর্থহীন তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন তারা।
বিবিসি জানায়, যুদ্ধে সোলেদার ঘিরে লড়াইয়েই সবচেয়ে রক্তক্ষয় দেখতে পাওয়া গেছে। শহরটিতে কোনও দেয়ালই অক্ষত দাঁড়িয়ে নেই বলে এ সপ্তাহে জানিয়েছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শহরটিতে রুশ সেনাদের মৃতদেহ পড়ে থাকা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চিহ্নের কথাও বর্ণনা করেছেন তিনি।
জেলেনস্কির চীফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক সোলেদার এবং বাখমুতের লড়াইকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে ভারদুনের তিক্ত লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আঞ্চলিক গভর্নর পাবলো কিরিলেঙ্কো বৃহস্পতিবার বলেছেন, শহরটিতে ৫৫৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫ শিশু আছে। তাদেরকে সরিয়ে নিতে হবে।
সোলেদার অপেক্ষাকৃত ছোট শহর হওয়ার কারণে এর গুরুত্ব নিয়ে রুশ সেনাবাহিনী এবং সামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। তবে ইউক্রেইনে ১০ মাসের যুদ্ধে রুশ সেনাদের নানা পরাজয়ের পর সোলেদার দখল করাটা মস্কোয় একটি জয় হিসাবেই প্রশংসিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক যুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক থিংক-ট্যাংক ইন্সটিটিউট কয়েকঘন্টা আগে বলেছে, রাশিয়া বাহিনী সোলেদার দখল করে থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে এরপর রুশ বাহিনী বাখমুত নগরী ঘিরে ফেলতে পারবে বলে তারা বিশ্বাস করেন না।
ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের মুখপাত্র শেরহি শেরেভাতি বলেছেন, রাশিয়া তাদের সবচেয়ে ভাল ভাড়াটে যোদ্ধা এবং অন্যান্য ইউনিটকে সোলেদারে পাঠিয়েছে।
তবে সোলেদার রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এমন দাবি অস্বীকার করে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে আর বিস্তারিত কিছু বলব না। কারণ, আমরা আমাদের যোদ্ধাদের কৌশলগত অবস্থান প্রকাশ করতে চাই না।”
ইউক্রেইনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, “সোলেদারে সারারাত তুমুল লড়াই হয়েছে। ইউক্রেইনের যোদ্ধারা খুবই সাহসিকতার সঙ্গে তাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ খুব কঠিন একটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”