ইউক্রেইনের অগ্রগতি, খেরসনের বেসামরিকরা পালাচ্ছেন রাশিয়ায়

ইউক্রেইনের যে ৪টি অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, খেরসন তার একটি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2022, 07:59 AM
Updated : 14 Oct 2022, 07:59 AM

খেরসনের মস্কোপন্থি প্রশাসন নিরাপত্তার খাতিরে বেসামরিক বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার পরামর্শ দেওয়ার পর তাদের অনেকেই রাশিয়া চলে যাচ্ছেন।

শুক্রবার ওই বেসামরিকদের প্রথম ব্যাচ রাশিয়ার রস্তভ অঞ্চলে পৌঁছাবে বলে রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে।

অধিকৃত অঞ্চলটিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ যে দুর্বল হচ্ছে, বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ তারই ইঙ্গিত বলে মনে করছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

“খেরসন অঞ্চলের সব বাসিন্দাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি, যদি তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে চান, তাহলে তারা অন্য এলাকায় যেতে পারেন। লোকজনের উচিত তাদের সন্তানদের নিয়ে চলে যাওয়া,” এক ভিডিও বার্তায় এমনটাই বলেছেন খেরসনের মস্কোপন্থি প্রশাসনের প্রধান ভ্লাদিমির সালদো।

এই পরামর্শ সবার আগে দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের জন্য প্রযোজ্য, বলেছেন তিনি।

এই পশ্চিম তীরের শহরগুলোর মধ্যে খেরসনের আঞ্চলিক রাজধানীও আছে, ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর বড় শহরগুলোর মধ্যে কেবল এটিই রাশিয়া অক্ষত অবস্থায় দখলে নিতে পেরেছিল।

ইউক্রেইনের যে ৪টি অঞ্চল রাশিয়া নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, খেরসন তার একটি। ক্রাইমিয়া যাওয়ার একমাত্র স্থলপথ এবং ইউক্রেইনকে দ্বিখণ্ডিত করা ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দিনিপ্রো নদীর মোহনা, দুটোই এর অধীনে থাকায় অনেকে একে ৪ অঞ্চলের মধ্যে কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করেন।

অক্টোবরের শুরু থেকে খেরসনে ইউক্রেইনীয় বাহিনীর অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে; পশ্চিম তীর ধরে বেশ খানিকটা ঢুকে পড়া কিইভবাহিনীর এখনকার লক্ষ্য হচ্ছে রুশ বাহিনীর রসদ সরবরাহের লাইন ও পালানোর পথ বন্ধ করে দেওয়া।

রাশিয়ার ‘ভূখণ্ডভুক্ত করে নেওয়া’ অঞ্চলগুলোর সীমান্তবর্তী রস্তভ অঞ্চলের গভর্নর বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, খেরসন ছেড়ে আসা লোকদের আশ্রয় দিতে তার অঞ্চল প্রস্তুত।

খেরসনের কাছে ইউক্রেইনের দখলে থাকা সবচেয়ে বড় শহর মাইকোলাইভে বৃহস্পতিবারও তুমুল গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া; তাদের গোলা বেসামরিক স্থাপনায়ও পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

আঞ্চলিক গভর্নর ভিতালি কিম বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় একটি পাঁচতলা ভবনের ওপরের দুই তলা ধ্বংস হয়েছে, বাকিটা ধ্বংসস্তূপের নিচে। রাজ্যের জরুরি বিভাগের সরবরাহ করা ফুটেজে উদ্ধারকর্মীদের ১১ বছর বয়সী একটি ছেলেকে উদ্ধারের চিত্র আছে, যে ছেলেটি জঞ্জালের নিচে ৬ ঘণ্টা আটকে ছিল বলে বলা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকালে পূর্বাঞ্চলীয় কুপিয়ানস্কের সেন্ট্রাল মার্কেটের কাছে তিনটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ এ রেলওয়ে জংশন শহরটি ইউক্রেইন সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে পুনরুদ্ধার করে।

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলদোমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার এক ভিডিও ভাষণে বলেছেন, ওয়াইন ও লবন উৎপাদনের জন্য খ্যাত দোনেৎস্কের বাখমুত শহরে ‘নিষ্ঠুর’ লড়াই চলছে।

“দক্ষতা ও বীরত্বের সঙ্গে বাখমুত রক্ষা করে যাচ্ছে ইউক্রেইনীয় বাহিনী,” বলেছেন তিনি।

একইদিন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টল্টেনবার্গ বলেছেন, মস্কোর পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকির কারণে ইউক্রেইনকে সমর্থন করা থেকে পিছু হটবে না নেটো জোট।

জোটটির অনেক সদস্য এরই মধ্যে কিইভকে নতুন করে সামরিক সহায়তা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

“তারা যদি ইউক্রেইনে একটাও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তার যে মারাত্মক পরিণতি আছে, তা তারা জানে,” নেটো জোটের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের দুইদিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন স্টল্টেনবার্গ। 

গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়া ইউক্রেইনের অসংখ্য শহরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে; ইউক্রেইনজুড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল স্থাপনায় এরই মধ্যে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র মেরেছে তারা।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, শনিবার ক্রাইমিয়া সেতুতে ইউক্রেইন যে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ চালিয়েছে, তার পাল্টায় এ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হচ্ছে।

অন্যদিকে জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইউক্রেইনের পুরোটা নয়, কেবল ১০ শতাংশের মতো অংশকে রাশিয়ার বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করলেই চলবে।

অনেক পশ্চিমা মিত্র এর মধ্যেই কিইভকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।