দক্ষিণ গাজায় আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত ৩২

হামাস যোদ্ধারা নিজেদের আড়াল করতে আবাসিক ভবন এবং ঘনবসতিপূর্ণ গাজার বিভিন্ন এলাকা ব্যবহার করছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

রয়টার্সবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2023, 02:22 PM
Updated : 18 Nov 2023, 02:22 PM

গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আবাসিক এলাকায় শনিবার তিনটি ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গাজার উত্তরাঞ্চল ঘিরে ফেলার পর এবার ইসরায়েলি বাহিনী ভূখণ্ডটির দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে। যে কারণে দক্ষিণ গাজা থেকে বেসামরিকদের তারা সরে যেতে বলেছে। ইসরায়েলের ওই সতর্কবার্তার পর শনিবারের এ হামলা হয় বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

যার ফলে ইসরায়েলের হামলার ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে যে লাখ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা সিটিসহ গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে পালিয়ে গিয়েছিল তাদের এখন আবার উত্তরে ফিরে আসতে হবে। দক্ষিণের সর্ববৃহৎ শহর খান ইউনিস, যেখানে উত্তর থেকে পালিয়ে আসা সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরসহ শহরটির চার লাখের বেশি বাসিন্দাকেও এখন বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে। শহরটিতে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

এমএসএনবিসি কে শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সহযোগী মার্ক রেজেভ বলেন, “আমরা লোকজনকে সরে যেতে বলেছি। আমি জানি অনেকের জন্য বিষয়টি খুবই কঠিন, কিন্তু আমরা চাই না বেসামরিক লোকজন হামাসের সঙ্গে আমাদের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ুক।”

গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার প্রতিজ্ঞা করে গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের এ হামলা অবশ্য হামাসই উস্কে দিয়েছে। গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে হামাস প্রথমে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেটে ছোড়ে। তারপর এক হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধা সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে রীতিমত হত্যাযজ্ঞ চালায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা ইসরায়েলে ১৪শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করে। জিম্মি করে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র চারজন জিম্মি মুক্তি পেয়েছেন। বাকিদের ভাগ্যে কি হয়েছে তা এখনো অজানা। যদিও হামাস বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় বেশ কয়েকজন জিম্মিও মারা গেছেন।

৭ অক্টোবর থেকেই গাজার উপর বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিশেষ করে বিমান হামলা চালিয়ে গাজা সিটি মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দিতে চায় তারা। গাজায় বাস করা ২৩ লাখ ফিলিস্তিনের দুইতৃতীয়াংশই এই যুদ্ধে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছে। যাদের অনেকে স্থায়ীভাবে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের হামলায় সেখানে ১২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। যাদের মধ্যে ৫ হাজারের বেশি শিশু।

তারা আরো জানান, শনিবার রাতে খান ইউনিসের একটি ব্যস্ত আবাসিক এলাকায় দুইটি বহুতল ভবনে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়েছেন।

ইয়াদ আল-জামী নাকে এক ফিলিস্তিনি রয়টার্সকে বলেন, খান ইউনিসে হামলায় তার এক ফুপু, তার সন্তান এবং নাতি-নাতনিরা নিহত হয়েছেন। “তারা সবাই গাজার উত্তর অংশে থাকতেন। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নির্দেশ মোতাবেক এখানে এসেছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, এখানে তারা নিরাপদ থাকবেন এবং এখানে তারা হয়তো শুধু মরতেই এসেছিলেন।

“তারা সবাই শহীদ হয়েছেন। হামাসের প্রতিরোধের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।”

জামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের মর্গের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। যেখানে নিহত ২৬ জনের মৃতদেহ রাখা ছিল। স্বজনরা সেগুলো কবর দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মর্গে ভিড় জমিয়েছিলেন।

উত্তর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে দেইর আল-বালাহ শহরে এদিন একটি বাড়িতে বোমা হামলায় আরো ছয় জন নিহত হন।

শনিবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকেও এক বিবৃতিতে গাজায় হামাসের কমান্ড সেন্টার, রকেট উৎক্ষেপণ ক্ষেত্র এবং অস্ত্রের কারখানায় বিমান হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। তবে কোনো আবাসিক এলাকায় হামলার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

তবে ইসরায়েল বলেছে, হামাস যোদ্ধারা নিজেদের আড়াল করতে আবাসিক ভবন এবং ঘনবসতিপূর্ণ গাজার বিভিন্ন এলাকা ব্যবহার করছে।