সন্ত্রাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীর নামের তুলনা, ভারতে অধ্যাপক বরখাস্ত

ভারতের কর্নাটকে উদিপি জেলার মানিপাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ক্লাসে যে শিক্ষার্থীর নাম নিয়ে ওই অধ্যাপক মন্তব্য করেন তাকে সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 05:01 PM
Updated : 29 Nov 2022, 05:01 PM

ভারতের কর্নাটকে একজন অধ্যাপক ক্লাসে একজন মুসলমান শিক্ষার্থীর নাম এক সন্ত্রাসীর সঙ্গে তুলনা করলে তার জেরে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় ওই কলেজ শিক্ষককে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

বিবিসি জানায়, ক্লাসে যে শিক্ষার্থীর নাম নিয়ে ওই অধ্যাপক মন্তব্য করেন তাকে সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, শুরু হয় বিতর্ক।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, কর্নাটকের উদিপি জেলার মানিপাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির একজন অধ্যাপক ক্লাসে একজন শিক্ষার্থী নাম জিজ্ঞাসা করেন। শিক্ষার্থী নিজের নাম বললে তিনি তাকে সন্ত্রাসীর সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘‘ওহ, তুমি কাসাবের মত।”

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আজমল কাসাব নামে এক সন্ত্রাসীকে জীবিত আটক করা সম্ভব হয়েছিল। বিচারের পর ২০১২ সালে যার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

কাসাবসহ লস্কর-ই-তায়েবার ১০ বন্দুকধারী সন্ত্রাসী ওইদিন প্রায় ৬০ ঘণ্টা পুরো মুম্বাইকে জিম্মি করে রেখেছিল।

তারা মুম্বাইয়ের বিখ্যাত একটি রেলস্টেশন, একাধিক বিলাশ বহুল হোটেল এবং ইহুদিদের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে অন্তত ১৬৬ জনকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। সন্ত্রাসীদের মধ্যে একমাত্র আজমল কাসাবই জীবিত ধরা পড়েছিল।

এই কাসাবের সঙ্গে নিজের নামের তুলনা মেনে নিতে পারেননি ওই মুসলিম শিক্ষার্থী। তিনি সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপকের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে একজন শিক্ষার্থীকে ওই অধ্যাপককে উদ্দেশ করে বলতে শোনা যায়, কাসাবের সঙ্গে তার নামের তুলনা ‘কোনো হাসিঠাট্টার বিষয় না’।

‘‘এই দেশে একজন মুসলমান হওয়া এবং প্রতিদিন এইসব মোকাবেলা করা কোনো হাসিঠাট্টার বিষয় না।”

এরপর ভিডিওতে অধ্যাপককে তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলতে শোনা যায়, ‘‘তুমি আমার ছেলের মত।”

কিন্তু অধ্যাপকের এই মন্তব্যে ওই শিক্ষার্থী শান্ত হয়েছে বলে মনে হয়নি। বরং তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এর অর্থ এই নয় যে আপনি (মুসলমাদের সম্পর্কে) যা ভাবেন সেটায় পরিবর্তন আসবে।”

ওই ঘটনা নিয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই অধ্যাপককে ক্লাসে পাঠদান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

টুইটারে বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের বৈষম্যমূলক মন্তব্যের নিন্দা করে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিয়মিত এ ধরনের পক্ষপাতের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

বিশেষ করে ২০১৪ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর।

নিজের অধিকারের পক্ষে সাহস করে আওয়াজ তোলায় অনেকে ওই শিক্ষার্থীর প্রশংসাও করেছেন।