দাবানলে নিখোঁজের সংখ্যা ১৩০০ তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
Published : 15 Aug 2023, 07:21 PM
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্যের মাউই দ্বীপে শতাব্দীর ভয়াবহতম দাবানলের পর সাত দিন পেরিয়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া অঞ্চলের ২৫ শতাংশে তল্লাশি অভিযান শেষে সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৯৯টি মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
পুরো অঞ্চলে তল্লাশি অভিযান শেষ করতে আরো ১০দিনের বেশি সময় লাগবে বলে সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন। এবং এই সময়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
গ্রিন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩শ মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দাবানলে পুড়ে যাওয়া মোট এলাকার ২৫ শতাংশে মৃতদেহ তল্লাশির কাজ শেষ হয়েছে।
গত মঙ্গলবার মাউইর ঐতিহাসিক শহর লাহাইনায় ছড়িয়ে পড়া দাবানলে ব্লকের পর ব্লক পুড়ে ছাই হয়ে যায়। শহরের বাইরে তৃণভূমিতে প্রথম দাবানল শুরু হয়েছিল।
পাশেই প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট একটি হারিকেনের কারণে সে সময় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২৮ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঝড়ো বাতাসের তোড়ে শুষ্ক তৃণভূমিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে এক পর্যায়ে তাপমাত্রা ৫৩৮ সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল বলে জানান গভর্নর গ্রিন।
পুরো লাহাইনা শহর আগুনে পুড়ে গেছে এবং সেখানে ‘ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই নেই’ বলে বলে রোববার সিবিএসকে বলেছিলেন গভর্নর গ্রিন।
তিনি বলেন, “শহরটির ১২ হাজার বাসিন্দার সবাই সম্ভবত জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছেন বা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।”
আগুনে মৃতদেহ এতটাই পুড়ে গেছে যে সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া সনাক্ত করা সম্ভব না বলেও জানান তিনি।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে লাশ খুঁজে বের করতে ফেডারেল এমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফিমা) থেকে ২০টি শবসন্ধানী প্রশিক্ষিত কুকুর মোতায়েন করা হয়েছে।
পুরো তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চালাতে কত দিন লাগতে পারে সে বিষয়ে আনুমানিক কোনো তথ্য দিতেও নারাজ ফিমা অ্যাডমিনিসট্রেটর ড্যানি ক্রিসওয়েল। বলেন, সেখানে এখনো ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
“শুধু মাত্র কুকুরগুলো দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারছে। কারণ, সেখানে তাপমাত্রা খুবই বেশি।”
দাবানলের পর প্রাথমিকভাবে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা কমে এক হাজার ৩০০ জনে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ফোন পরিষেবার উন্নতি হওয়ায় অনেকেই স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।
যারা এখনো স্বজনদের খুঁজে পাননি প্রশাসন থাকে তাদের নিজেদের ডিএনএ নমূনা দিয়ে যেতে বলা হচ্ছে। যাতে পুড়ে যাওয়া মৃতদেহের ডিএনএ-র সঙ্গে মিলিয়ে সেগুলোর পরিচয় সনাক্ত করা যায়।
লাহাইনার অনেক বাসিন্দা এখন শহরে ফিরতে চাইছেন। তাদের ধর্য্য ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ, এখনো সেখানে মৃতদেহ উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান বাকি আছে।
মাউই কাউন্টির পুলিশ প্রধান জন পেলেটিয়ার আরো বলেন, “স্বজন ও বন্ধুদের খুঁজতে গিয়ে আমরা সেখানে যা খুঁজে পাচ্ছি তা হলো ওই আগুনের ধ্বংসযজ্ঞ যেটির প্রচণ্ড তাপ ধাতুকে পর্যন্ত গলিয়ে ফেলেছে।
“এখন আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা। যাতে তাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়। মৃতদেহগুলো দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই।”
দাবানলের কারণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। লাহাইনার অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, শহরজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে তারা কোনো সতর্ক বার্তা পাননি। এমনকি সতর্ক সাইরেনগুলো পর্যন্ত বাজেনি। আগুন থেকে বাঁচতে কিছু লোক পাশের প্রশান্ত মহাসাগরে পর্যন্ত ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
পর্যটকদের পশ্চিম মাউই থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে দ্বীপটির অন্য পাশে পর্যটকদের যেতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।