মেয়ের চিত্রকর্মের জেরে রাশিয়ায় সাজা, পলাতক বাবা পাকড়াও বেলারুশে

মেয়ের যুদ্ধবিরোধী চিত্রকর্মের জেরে রুশ আদালত বাবা অ্যালেক্সি মস্কালেভের অনুপস্থিতিতেই তাকে কারাদণ্ড দিয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 07:14 PM
Updated : 30 March 2023, 07:14 PM

মেয়ে স্কুলে যুদ্ধবিরোধী ছবি আঁকার জেরে রাশিয়ায় কারাদণ্ড পাওয়া বাবা অ্যালেক্সি মস্কালেভ পলাতক অবস্থায় ধরা পড়েছেন বেলারুশে।

বিবিসি জানায়, রাশিয়ার একটি আদালত গত মঙ্গলবার মস্কালেভকে তার অনুপস্থিতিতিতেই দুই বছরের জেল দেয়। রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে অসম্মান করা হয়েছে অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত এ সাজা শোনায়।

মস্কালেভ আদালতের রায় ঘোষণার কয়েক ঘন্টা আগেই গৃহবন্দিত্ব থেকে পালিয়ে যান। এরপর বেলারুশের রাজধানী মিন্সকের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হঠাৎ করেই তিনি ধরা পড়েছেন বলে বৃহস্পতিবার একাধিক খবরে শোনা গেছে।

মস্কালেভ ও তার মেয়েকে নিয়ে শোরগোল শুরু হয় গত বছর। যখন স্কুল কর্তৃপক্ষ মস্কালেভের ১২ বছর বয়সী মেয়ের আঁকা একটি ছবির বিষয় নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে।

মস্কালেভ তার পরিবার নিয়ে মস্কো থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর ইয়েফরেমভে বাস করতেন।

তার জীবনে সমস্যার শুরু হয় যখন তার মেয়ে মাশা মস্কালেভ গত বছর এপ্রিলে স্কুলে একটি ছবি আঁকে। ওই ছবিতে শিশুটি ইউক্রেইনের পতাকা আঁকে।

পতাকার ভেতর রুশ ভাষায় লেখা ‘গ্লোরি টু ইউক্রেইন’, দুটি রকেট ওই পতাকার দিকে ধেয়ে আসছে এবং মেয়ের হাত ধরে থাকা এক নারী ওই রকেট ‍দুটো হাত দিয়ে আটকাতে চাইছেন। রকেটের নিচের দিকে রাশিয়ার পতাকা, তাতে লেখা ‘যুদ্ধ নয়’।

মস্কালেভ জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ তার মেয়ের আঁকা ছবির বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী পোস্ট দেওয়ার কারণে জরিমানা গুণতে হয় মস্কালেভকে।

কিন্তু জরিমান গুণলেও মস্কালেভ পরিবারের মাথার ওপর থেকে বিপদ কাটেনি। গত বছর ডিসেম্বরে মস্কালেভের ফ্ল্যাটে পুলিশ হানা দেয় এবং তল্লাশি চালায়।

তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কারণ, একই ধরনের অভিযোগে এরই মধ্যে তিনি দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন।

মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ মাশাকে তার বাবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে একটি শিশু হোমে রাখে। গত ১ মার্চ থেকে মাশাকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।

গত মঙ্গলবার মস্কালেভের অনুপস্থিতিতে রুশ আদালত তার সাজার রায় দেওয়ার সময় আদালতের প্রেস সচিব বলেছিলেন, তিনি (মস্কালেভ) গৃহবন্দি অবস্থা থেকে পালিয়ে গেছেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হয়নি।একজন আইনজীবী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি খুব সম্ভবত বেলারুশের মিনস্কে ধরা পড়েছেন।

‘‘সেখানে মোবাইল ফোন চালু করায় তার অবস্থান প্রকাশ পেয়ে যায়। কেউ একজন ভুল করে তার অবস্থান প্রকাশ করে দিয়েছে। খুব সম্ভবত মোবাইল ফোন সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে না পেরে তিনি নিজেই এটা করেছেন।”

রয়টার্সের পক্ষ থেকে মিনস্কের কাছে মস্কালেভের আটকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রাশিয়ার অনুরোধে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মস্কালেভ কীভাবে বেলারুশ পৌঁছেছেন তা এখনও জানা যায়নি। তবে রাশিয়া থেকে যারা অবৈধ পথে অন্য দেশে যেতে চান তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেলারুশ হয়েই যান।

মস্কালেভের সাজা নিয়ে ‘হতবাক’ ইয়েফরেমভ নগরীর কাউন্সিলর ওলগা পোডোদস্কায়া বলেন, ‘‘মত প্রকশের কারণে আপনাকে যদি কারাদণ্ড পেতে হয় তবে সেটি ভয়ঙ্কর। দুই বছরের জেল দুঃস্বপ্নের মতো।”